হলুদবরণ রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে বিয়ের আয়োজন থেমে নেই

বিয়েতে সম্মতি ছিল না। তার ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষা বাদ দিয়ে জোরপূর্বক ছাত্রীটির গায়েহলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পরিবার। খবর পেয়ে প্রশাসন ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়।
জানা গেছে, গতকাল সকালে যথাসময়ে গোয়ালন্দের দক্ষিণ উজানচর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসাকেন্দ্রে উপজেলার সাতটি মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়। তবে ওই ছাত্রীর মাদ্রাসার সবাই উপস্থিত থাকলেও সে ছিল অনুপস্থিত।
এ ঘটনায় কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষক ইউনুছ আলী সকালেই ছাত্রীটির গায়েহলুদের বিষয়টি মাদ্রাসা সুপার ইসমাঈল হোসেনকে জানান। মাদ্রাসা সুপার ও ওই শিক্ষক কেন্দ্রসচিব মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেনকে বললে তিনি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ ঘোষকে জানান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার তোরাবুল ইসলাম ও ইউনুছ আলীকে পাঠিয়ে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর সদর উপজেলার একটি বাড়িতে আয়োজিত গায়েহলুদের অনুষ্ঠানস্থল থেকে ছাত্রীটিকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
তোরাবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছাত্রীর মা-বাবাকে বুঝিয়ে তাকে দ্রুত পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসি। যতদূর জানতে পেরেছি, সে মেধাবী ও বিয়েতে রাজি ছিল না।’
ইউএনও পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ছাত্রীটিকে বিয়ে দিতে তার মা-বাবাকে নিষেধ করা হয়েছে। এর পরও বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ের আয়োজন থেমে নেই। বাড়ির উঠান পরিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রীর বাবা রান্নার জ্বালানি প্রস্তুত করছেন। কয়েকজন নারী রান্নার মসলা প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত। বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ওই ছাত্রী বলে, ‘আমি পরীক্ষা দিতে চাই। তবে বিয়েতে রাজি হইনি বলে আমার পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ করা হচ্ছিল। তবে আমি পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে চাই।’
ছাত্রীর বাবা বলেন, ফরিদপুরের তালতলা এলাকার এক বিদ্যুৎ মিস্ত্রির সঙ্গে শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ছিল গায়েহলুদ। ছেলের পরিবারের চাপাচাপিতে আগেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, পরীক্ষার জন্য দেরি হয়। কয়েকবার হরতালের কারণে বিয়ের তারিখ পিছিয়ে যায়। হরতাল না হলে আরও আগেই বিয়ে হতো।