খরচ হয় না চর উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ আয়োজিত ও ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় চর কনভেনশন প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ছবি: সংগৃহীত খরচ হয় না চর উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ আয়োজিত ও ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় চর কনভেনশন প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ছবি: সংগৃহীত খরচ হয় না চর উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা

চর অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে ৫০ কোটি বরাদ্দ হলেও তা খরচ হয় না। কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই বরাদ্দের টাকা খরচ হবে, অর্থ মন্ত্রণালয় তা ঠিক করতে না পারায় খরচ হয় না পুরো টাকা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ আয়োজিত ও ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় চর কনভেনশন প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠানের সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘স্যার আমাকে জানিয়েছেন, চর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সরকার গত বছর ৫০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু এর একটি টাকাও খরচ হয়নি। এটা খুবই অবাক করা, দুঃখজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক একটি তথ্য। স্যার আমাকে বললেন, এটি না করার কারণ, অর্থ মন্ত্রণালয় নাকি ভেবে উঠতে পারেননি কোন মন্ত্রণালয় এটি খরচ করবে। এই হলো সমস্যা।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, এ বছরও বাজেটে চর উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা এসেছে। যদি এত মানুষ এখানে বসার পরও কাজ নয় হয়, তাহলে মানুষ আমাদের ওপর আস্থা হারাবে। এ জন্য চরের উন্নয়ন সংশ্লিষ্টদের অর্থ, পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। হাওর বোর্ডের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সেটার আদলে কিংবা বোর্ডের মধ্যেই আলাদা কোনো বিভাগ করে চরের উন্নয়ন করার প্রস্তাব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার আলম চরের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কোথাও নতুন বড় চর জেগে উঠলে, সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেটাকে অধিগ্রহণ করে বড় আকারে কোনো প্রকল্প করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। এই উদ্যোগটা যেদিন থেকে নেওয়া হয়, সেদিন থেকে ওই চরে কোনো মানুষকে উঠতে দেওয়া হয় না। গরিব-দুঃখী মানুষকে কোনো স্থাপনা করতে দেওয়া হয় না। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেই সরকারি প্রকল্প এক যুগেও বাস্তবায়ন হয় না। তাহলে এই মানুষগুলো কোথায় যাবে?’
শাহরিয়ার আলম আয়োজকদের উদ্দেশ করে বলেন, চরের অধিবাসী যারা ভূমি হারিয়েছে, তাদের নিয়ে একটি ডাটা ব্যাংক করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে সরকার জেগে ওঠা নতুন চর নিয়ে একটা ডাটা ব্যাংক করতে পারে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে প্রয়োজনে এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে বসতি স্থাপন করতে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছরে টাকার অঙ্কে বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে চর, হাওর-বাঁওড় ও আদিবাসী এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে, নজর দিতে হবে। তা না হলে আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, তারা সেভাবে এগোতে পারবে না। পিছিয়ে পড়বে।
অনুষ্ঠানে চর অঞ্চলের মানুষের স্থায়ী জীবিকায়ন, বৈষম্যহীন সমাজ এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৪ দফা প্রস্তাবনা দেয় ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্স। গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল গোলনা আদর্শপাড়া কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশন (সিবিও) সভানেত্রী ইয়ারুন বেগম প্রস্তাবনাগুলো দেন।
প্রস্তাবগুলো হলো—মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, দুর্যোগ সহনশীল জীবিকা নিশ্চিত, চরের ভূমিতে চরবাসীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারি উদ্যোগে যৌথ কমিশন গঠন, চরাঞ্চলের কৃষির উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও বরাদ্দ পুনর্বিন্যাস, চর উপযোগী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, চর এলাকায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সিএসআর কার্যক্রমে উৎসাহিত করা, সরকারি সেবা ও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, জেন্ডারকে মূলধারায় নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান কৃষি শ্রম ও ভূমি অধিকারসহ সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার বাস্তবায়ন এবং চরের উন্নয়নে একটি ফাউন্ডেশন ও চর উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি স্নেহাল ভি. সোনেজি, কেয়ার বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি জেমি তেরজি, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের এদেশীয় প্রতিনিধি এ কে এম মুসা প্রমুখ।