শিক্ষাবর্ষ শেষেও বেতন থেকে মুক্তি নেই

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ চলছে। ডিসেম্বরে শেষ হবে তাদের শিক্ষাবর্ষ (সেশন)। কিন্তু এই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই ২০১৬ সালেরও সেশন চার্জ ও বেতন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী মহানগরের প্রায় ৯০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এভাবে বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে।
এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষক সমিতির নেতা ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বলছে, তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। সামনে পরীক্ষার কারণে কেউই এ নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চান না। নীরবে অনৈতিক এই দাবি মেনে নিচ্ছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় পরবর্তী বছরের ছয় মাসেরও বেতন ও সেশন চার্জ নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি শিক্ষা বোর্ড ও আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও জানেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বোর্ডের পক্ষ থেকে এবার বিষয়প্রতি ৭০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য ৩০ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বাবদ ৩৫ টাকা, মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা, স্কাউট ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকা—সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু নগরের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো এর বাইরেও ২০১৬ সালের ছয় মাসের বেতন ও সেশন চার্জ আদায় করছে। নগরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নির্ধারিত বোর্ড ফি ছাড়াও ৩ হাজার ৩১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের ছয় মাসের বেতন বাবদ ২ হাজার ১০০ টাকা এবং সেশন ফি বাবদ ১ হাজার ২১০ টাকা। শহীদ নজমুল হক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এই দুই খাতে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা।
এ বিষয়ে অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সাইফুল হকের দাবি, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির নেতা ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে একটি রেজল্যুশন করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে এই অর্থ আদায় করা হচ্ছে। তবে তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
এভাবে নগরের প্রতিটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন দাবি করেন, তাঁরা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ডিসেম্বরের পরের কোনো চার্জ আদায় করছেন না।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শামসুল কালাম আজাদ জানান, বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য বোর্ড থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। এ ধরনের অর্থ আদায়ের ব্যাপারে কোনো অভিভাবক তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, এ ধরনের অর্থ আদায়ের কোনো বিধান নেই। কেউ অভিযোগ করলে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।