চার মাস ধরে স্কুলের ফটকে ময়লা পানি

দেখে মনে হবে বর্ষাকাল চলছে। আদতে পয়োনিষ্কাশন নালার মুখ বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা চলছে সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনের এই সড়কে। ছবিটি কামরাঙ্গীরচর এলাকার ছাতার মসজিদ এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা l ছবি: মনিরুল আলম
দেখে মনে হবে বর্ষাকাল চলছে। আদতে পয়োনিষ্কাশন নালার মুখ বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা চলছে সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনের এই সড়কে। ছবিটি কামরাঙ্গীরচর এলাকার ছাতার মসজিদ এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা l ছবি: মনিরুল আলম

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ছাতা মসজিদ সড়কের ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনের সড়কে প্রায় চার মাস ধরে পানি জমে আছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সড়কের বেঞ্চ পাতা হয়েছে। এই বেঞ্চের ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই তা উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। ময়লা পানিতে মাখামাখি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার কারণে অনেকেই নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে না। অনেকে রিকশায় করে পানি পার হচ্ছে। সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। ছাতা মসজিদ সড়ক এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে।
ডিএসসিসির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছাতা মসজিদ সড়ক এলাকায় সুয়ারেজ লাইনের মুখে বালু ফেলে তা বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সুয়ারেজ লাইন নতুন করে নির্মাণের দরপত্র চূড়ান্ত করেছে ডিএসসিসি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্মাণকাজ শুরু হবে। এখন প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন পানি কমায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি ‘পানির পাম্প’ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে সুয়ারেজ লাইন ভেঙে বের হচ্ছে ময়লা পানি। এতে আশ্রাফাবাদ লোহার সেতুর ঢাল থেকে ছাতা মসজিদ এলাকা (প্রায় ৫০০ ফুট) পর্যন্ত সড়কে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি পরিমাণ পানি জমে আছে। বাতাসে দুর্গন্ধ। তা মাড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। একইভাবে চলাচল করছেন পথচারীরা। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে অনেক দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে স্কুলের প্রধান ফটক। এখন পাশের একটি বাড়ির ফটক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছেন তাঁরা। অনেকে আবার জলাবদ্ধতা পাড়ি দিতে রিকশায় করে যাচ্ছেন। সড়কের উত্তর পাশে বন্ধ অবস্থায় আছে পাম্প।
সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইমুনা হোসেন মুনা বলেছে, ‘স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য সড়কে বেঞ্চের ব্যবস্থা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এসব বেঞ্চের ওপর দিয়ে হাঁটতে অনেক ভয় হয়, কখন যেন উল্টে পড়ে যাই। এ ছাড়া স্কুলে যাতায়াতের সময় সড়কে দ্রুতগতিতে কোনো গাড়ি চললে ময়লা পানি এসে শরীরে পড়ে। এতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’
জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিন নাতি জি এম তাহসিনকে কোলে নিয়ে (দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র) স্কুলে আসেন নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘স্কুলে আসা-যাওয়ায় অধিকাংশ সময় কোনো রিকশা পাওয়া যায় না। ফলে কয়েক মাস ধরে ময়লা পানিতে হেঁটে গায়ে চুলকানি হইছে।’
ছাতা মসজিদ সড়কে মো. ফয়সাল স্টোরের মালিক ফয়সাল বলেন, সড়কে ময়লা পানি থাকায় দোকানে ক্রেতারা আসতে চান না। এতে বেচা-বিক্রি অনেক কমে আসছে। কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, সড়কে নামলেই কাপড় নোংরা। এতে করে ছাতা মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারেন না মহল্লার বাসিন্দারা।
সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক বি এম মনির হোসেন বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যাতায়াতে সড়কের এক পাশে বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বেঞ্চের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় অনেক শিক্ষার্থীই পানিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়। এ ছাড়া সড়কে ট্রাকসহ বড় যানবাহন চলাচলের সময় বেঞ্চগুলো উল্টে যায়।