সুচ হয়ে ঢুকে দাঁও মারলেন, ধরাও পড়লেন

ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে পোশাক কারখানার নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য তৈরি করেছিলেন ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র। নিয়ে এসেছিলেন চেয়ারম্যানের ভুয়া সনদও। এরপর সুযোগ বুঝে আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই কারখানা থেকে ১৬ লাখ টাকা চুরি করে চম্পট দেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সম্প্রতি দুই সহযোগীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক মিয়া (২৮) নামের এই ব্যক্তি ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে চুরি করার কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল শুক্রবার রিমান্ড শেষে ফারুকসহ তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
৮ নভেম্বর রাতে রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় ‘শমশের রিজিয়া ফ্যাশন লিমিটেড’ নামের একটি পোশাক কারখানায় চুরির ঘটনাটি ঘটে। দুই নিরাপত্তাকর্মীকে জুস খাইয়ে অচেতন করে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে যায় চোরেরা। ঘটনার পর থেকে বাবুল নামের এক নিরাপত্তাকর্মী পলাতক থাকায় তাঁকে সন্দেহ করে কারখানার কর্তৃপক্ষ। ৯ নভেম্বর রাতে কারখানার ব্যবস্থাপক পারভেজ চৌধুরী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন।
বাড্ডা থানার পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে প্রথমে কারখানার প্রধান ফটকে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজে দেখা যায়, বাবুল নামের ওই নিরাপত্তাকর্মীসহ অচেনা দুজন কারখানাটিতে ঢুকছেন। ফুটেজ দেখে চুরির ঘটনায় বাবুলের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। এ জন্য পুলিশের নিজস্ব সোর্সও ব্যবহার করা হয়। ওই সোর্সের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থেকে ‘বাবুলকে’ গ্রেপ্তার করা হয়। দেখা যায়, বাবুল নামটি ভুয়া। তাঁর মূল নাম ফারুক মিয়া। কারখানায় জমা দেওয়া তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ও চেয়ারম্যান সনদটিও ভুয়া। জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দেওয়া আছে বরগুনার আমতলী। বাবার নাম শাহজাহান মিয়া। আসলে তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নারায়ণপুরে। ফারুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর দুই সহযোগী রানা সরদার ও ফিরোজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের কাছ থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা কোথায়, তা তাঁরা কিছু জানাননি। তাঁরা ওই টাকাটাই চুরি করেছিলেন বলে স্বীকার করছেন।
এসআই বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া বাবুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, চুরি করার উদ্দেশ্যেই ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে ওই কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে সঙ্গে থাকা দুই নিরাপত্তাকর্মীকে খাওয়ান। তাঁরা অচেতন হয়ে পড়লে আশপাশে থাকা সহযোগী রানা ও ফিরোজকে সঙ্গে নিয়ে চুরির ঘটনা ঘটনা তিনি।
এসআই বলেন, ফারুক এভাবে আরও কোথাও অপরাধমূলক কাজ করেছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এভাবে ভুয়া পরিচয়ে অপরাধ করাই তাঁর পেশা। এর সঙ্গে একটি বড় ধরনের চক্র জড়িত থাকতে পারে।
‘ভুয়া পরিচয়পত্র ও চেয়ারম্যান সনদ কোথায় তৈরি করা হয়েছে?’ এ প্রশ্নের জবাবে এসআই বলেন, এ ব্যাপারে গ্রেপ্তার হওয়া ফারুককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, যে সোর্স ব্যবহার করে পুলিশ তাঁদের ধরেছে, সে সোর্সই এগুলো তৈরি করে দিয়েছে। আসলে ফারুকের এ দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাঁদের ধরিয়ে দেওয়ায় সোর্সকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন ফারুক।
যাচাইবাছাই ছাড়া নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের ব্যাপারে কারখানার ব্যবস্থাপক পারভেজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আমরা সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র ও চেয়ারম্যান সনদ দেখে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছি। তবে এটা ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও যাচাইবাছাই করে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।
রাজধানীতে এর আগেও ভুয়া তথ্য দিয়ে নিয়োগ পেয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের ৩ অক্টোবর চকবাজার থানা এলাকায় এক মাইকের দোকান থেকে ২০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান দুই কর্মচারী। পরে তাঁদের দেওয়া ঠিকানামতো গিয়ে দেখা যায়, ঠিকানাটি ভুয়া।