সরকারবিরোধী আন্দোলনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মহড়া

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। যাঁরা রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকবেন, আগামী নির্বাচনে তাঁদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষণার পর এই তৎপরতা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা পৃথকভাবে বিশাল কর্মী-সমর্থক নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। শুধু গত ৩১ অক্টোবরই তাঁরা নারায়ণগঞ্জের নয়টি পৃথক স্থানে বিশাল মিছিল-সমাবেশ করে মহড়া দিয়েছেন। প্রতিটি মিছিলে ব্যানারে সামনে ছিলেন তাঁরা। হাত নাড়িয়ে আশপাশের জনগণকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া হরতালেও তাঁরা পৃথকভাবে মাঠে ছিলেন।

৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ এবং পরে মিছিল বের করেন। একই দিনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম বন্দর উপজেলার কাবিলার মোড় থেকে রেললাইন পর্যন্ত মিছিল করেন। তৈমুর ও কালাম দুজনেই ওই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, রূপগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। একই আসনে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক, পাকিস্তান আমলে নারায়ণগঞ্জের ধনাঢ্য শিল্পপতি গুলবক্স ভূঁইয়ার নাতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ওরফে দীপুও চান দলের মনোনয়ন। মনির সেদিন তারাবতে ও মোস্তাফিজ কাঞ্চনে মহড়া দেন।

২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা বিভাগে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন মোহামঞ্চদ শাহ আলম। ওই আসনে ফতুল্লার সঙ্গে এবার সিদ্ধিরগঞ্জ যুক্ত হয়েছে। এই আসনে এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহ আলম ৩১ অক্টোবর ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে মহড়া দেন। ওই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও কয়েকজন থাকলেও তাঁদের মাঠে দেখা যায়নি।

জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘এখন প্রধান লক্ষ্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন সফল করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদরুজ্জামান খসরু ৩১ অক্টোবর তিলচণ্ডী বাজারে এবং যুবদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে আজাদ উপজেলা সদরে পৃথকভাবে মহড়া দেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে পৃথক মহড়া দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম।

মহড়ার পরদিন ১ নভেম্বর শহরের মাসদাইরে নিজ বাসভবনে নগর বিএনপির সভায় তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, যাঁরা সারা বছর মাঠে থাকেন না, বিগত সাত বছর যাঁরা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংস্কারবাদী হয়েছিলেন, সেনাবাহিনী যখন তারেক রহমানের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়, তখন যাঁরা এমপি কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাঁরা যদি এবার মনোনয়ন আনতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান, সেদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ১০ হাজার লাঠি যাবে।

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৈমুর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবুল কালামকে ইঙ্গিত করেই এসব কথা বলেছেন।