মেয়র বললেন, 'মাস্তানি চলবে না'

রাজধানীর তেজগাঁওতে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে আজ রোববার দুপুর একটার দিকে অভিযান শুরু হয়। এ সময় মারমুখী হয়ে ওঠেন ট্রাকচালকসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা। ছবি: জাহিদুল করিম
রাজধানীর তেজগাঁওতে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে আজ রোববার দুপুর একটার দিকে অভিযান শুরু হয়। এ সময় মারমুখী হয়ে ওঠেন ট্রাকচালকসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা। ছবি: জাহিদুল করিম

রাজধানীর তেজগাঁওতে আজ রোববার ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে বাধা দিয়েছেন ট্রাকচালকসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। বাইরে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর একটার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের লোকজন ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের অভিযান শুরু করেন। এ সময় সেখানে ছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পরই চালক ও স্থানীয় লোকজন উচ্ছেদকারীদের ওপর ইট পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ও মন্ত্রী-মেয়রকে রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ সময় এক ট্রাকচালক আহত হন। আহত ট্রাক চালকের নাম জসিমউদ্দিন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুরের শিকার হয়েছে চ্যানেল আইয়ের গাড়ি। ওই গাড়ির চালক আজহার আহত হন। এ ছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ফটোসাংবাদিক তানভীর আহমেদের মাথায় ইটের আঘাত লেগেছে। তাঁর ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেন্টু চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, জসিমউদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি লেগেছে।

ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য মেয়র আনিসুল হক বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা মাস্তানি করছেন, তাদের বলছি—এসব মাস্তানি চলবে না। ঢাকা শহরে এসব অবৈধ কাজ হবে না।’

মেয়র আনিসুল হক আরও বলেন, ‘আমাকে ঢাকা শহর গড়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার ওপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন আছে। সমস্ত ঢাকাবাসী আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমাদের সঙ্গে কাউন্সিলরেরা আছেন। কিন্তু মাঝখান থেকে একজন ইট মেরে দিল, আর হইচই শুরু হলো। কিছু স্বার্থপরায়ণ লোকের কারণে এসব হচ্ছে। আমরা তাদের চিনি। আমরা এসব মেনে নেব না। একটাই চাওয়া মেয়রের, রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করবেন না।’

শ্রমিকেরা এখন সড়কে বিক্ষোভ করছেন—সাংবাদিকেরা এমন প্রসঙ্গ তুললে আনিসুল হক বলেন, ‘এসব সরকার সরাবে। আমাকে বললে আমি ওইখানে গিয়ে বক্তব্য দেব। চলেন, সবাই যাই। ঢিল মারলে আমার মাথা ফাটবে। আমি সব বুঝেই এসেছি।’

দীর্ঘ সময় শ্রমিক-পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলেছে। মেয়র যেখানে আছেন, সেই বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ের বাইরে শ্রমিকেরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। মেয়রের প্রটোকলের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ট্রাক চালক শ্রমিকেরা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তারা তেজগাঁওয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকেরা মেয়রের প্রটোকলের গাড়ি ভাঙচুর করেন। ছবি: জাহিদুল করিম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তারা তেজগাঁওয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকেরা মেয়রের প্রটোকলের গাড়ি ভাঙচুর করেন। ছবি: জাহিদুল করিম

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। ওই সময়ের মধ্যে কেউ ট্রাক সরাননি দেখে তিনি ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সরানোর জন্য মালিকদের সময় বেঁধে দেন।

এর আগে ১ নভেম্বর রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন মেয়র। তখন তিনি বলেছিলেন, ৭ নভেম্বরের মধ্যে তেজগাঁওয়ে রেলওয়ের জায়গার অবৈধ স্থাপনা না সরালে ৮ নভেম্বর সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। ৮ তারিখ থেকে তেজগাঁওয়ের কোনোখানে কোনো ট্রাক দিনে-রাতে দাঁড়াবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। ছবি: জাহিদুল করিম
উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। ছবি: জাহিদুল করিম

রেলের জমিতে গড়ে ওঠা ট্রাকস্ট্যান্ড চলে গেছে অবৈধ দোকানপাট, পুরোনো ও বিকল ট্রাকের দখলে। তাই সারি সারি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান রাখা হচ্ছে সড়কের দুই পাশজুড়ে। ফলে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেললাইন পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। ট্রাকস্ট্যান্ডের ভেতরে পুরোনো অনেক ট্রাক পড়ে আছে। ট্রাকস্ট্যান্ডের ভেতরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক মেরামত কারখানা। এসব দোকানের যন্ত্রাংশ, অব্যবহৃত ও বাতিল জিনিসপত্র পুরো স্ট্যান্ডকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে।

আরও পড়ুন: