হরতালে বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্ন সহিংসতা

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের হরতালের শুরুতেই আজ রোববার বিভিন্ন জেলায় ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি ভাঙচুর ও রেললাইন তুলে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

নারায়ণগঞ্জ: আজ ভোর সাড়ে ছয়টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার ফতুল্লার ভোলাইল এলাকায় ফতুল্লা থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন জানান, পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এর আগে সকালে শহরের ফলপট্টি এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন খোকন শাহকে আটক করে।

অন্যদিকে সাড়ে সাতটার দিকে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখি এলাকায় বিএনপির সমর্থকেরা মিছিল বের করে ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

নোয়াখালী: ভোর পাঁচটার দিকে জেলার সেনবাগ উপজেলার সেবারহাট পশ্চিম বাজারে পিকেটাররা ঢাকা থেকে আসা সংবাদপত্রবহনকারী মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে মাইক্রোবাসটির পেছনের কাচ ভেঙে যায়।

এর আগে গত দুটি হরতালেও জেলার মাইজদী বাজার ও বেগমগঞ্জের বাংলাবাজার এলাকায় সংবাদপত্রের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া সকাল থেকে জেলা শহরের দত্তেরহাট, ফকিরপুর, রশিদ কলোনি ও মাইজদী বাজার এলাকায় পিকেটাররা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে। গতকাল রাত ১২টার দিকে কবিরহাটের চাপরাশিরহাটে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ও একটি ট্রাকে আগুন দেয় পিকেটাররা। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি পুরোপুরি ও ট্রাকটি আংশিক পুড়ে যায়।

সিরাজগঞ্জ: হরতালের সমর্থনে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শহরের রেলগেট এলাকায় পর পর দুটি পেট্রলবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল-সমর্থকেরা। এ ছাড়া হরতালের সমর্থনে শহরের কাঠেরপুল ও সমাজকল্যাণ মোড় এলাকায় জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় তারা হরতালের সমর্থনে ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

ভোররাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের নলকায় রংপুরগামী ধানবোঝাই মিনি ট্রাকে আগুন দেয় পিকেটাররা। পরে পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সকালে বেলকুচির মুকুন্দগাতী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে যুবদলের মিছিল থেকে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম এমরান হোসেন জানান, নাশকতার আশঙ্কায় গতকাল রাতে জামায়াতের রোকন শামছুল আলম তালুকদার, ছাত্রদলের কর্মী মুরাদ ও আসলামকে আটক করেছে পুলিশ।

চাঁদপুর: হরতাল-সমর্থনকারীরা চাঁদপুরের বাবুরহাট-ঢাকা সড়ক ও চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের বাগাদী এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের কুমারডুগী এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। জেলার বাগড়া বাজার এলাকায় সকাল ১০টার দিকে পিকেটিংকে কেন্দ্র করে হরতাল-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আমির জাফর জানান, হরতালে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে মতলব দক্ষিণ থেকে ছয়জন ও শাহরাস্তি থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া ও সদরে হরতালের সময় নাশকতার অভিযোগে বিএনপির চার থেকে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১০-১২টি মামলা করা হয়েছে।

লালপুর (নাটোর): গতকাল রাতে লালপুর উপজেলার শ্রীরামগাড়ী নামক স্থানে রেললাইনের কিছুটা অংশ উপড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে মেরামতকাজ শেষ হলে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়া ট্রেনগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সকাল ছয়টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশের একটি দল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনকে গ্রেপ্তার করে। প্রতিবাদে শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক দফা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবারের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রব প্রথম আলো ডটকমকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।