বুঝিয়ে বিদ্রোহীদের নিরস্ত করতে চায় বিএনপি

পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যাঁরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে চায় না বিএনপি। ‘বুঝিয়ে-শুনিয়ে’ বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে। বিদ্রোহী প্রার্থী নয়, বিএনপিকে ভাবাচ্ছে কেন দলের অনেক জনপ্রিয় নেতা এবার নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেন না। কয়েকটি পৌরসভায় প্রার্থী-সংকট বরং দলকে চিন্তায় ফেলেছে।

অবশ্য বরাবরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে বিএনপি। যখন দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়নি তখনো দল-সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে দলীয় কোনো নেতা নির্বাচন করলে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, বহিষ্কার কোনো সমাধান নয়।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত দুই নেতা প্রথম আলোকে এ কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, দলের কাছে আসা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছেন এমন পৌরসভার সংখ্যা ২৩টি। মোট বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ২৭ জন। এর মধ্যে ১২টি পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দলের ‘নিশ্চিত’ বিজয় হাত ছাড়া হতে পারে বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আরও অন্তত ৩০টির মতো পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী যেমন আছেন, তেমনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের রাজি করানো না গেলে তাঁদের আলোচনার জন্য ঢাকায় ডেকে আনা হতে পারে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, ১১টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে কালকের মধ্যে আপিল করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর, ফেনী সদর ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কোনো বিকল্প প্রার্থী নেই। এখানে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া না গেলে বিএনপি কাউকে সমর্থন দিতেও পারবে না। এখন বিএনপির প্রার্থী আছে ২২২টি পৌরসভায়। তবে জামায়াতকে ছাড় দিলে দলীয় প্রার্থীর সংখ্যা আরও কমবে।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত দলের সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে দল খুব বেশি চিন্তিত নয়। এই সংখ্যা বেশি হবে না। অনেক পৌরসভাতে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছিল। সেখানে দলের প্রার্থী বৈধ হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বিকল্প প্রার্থীরা নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেবেন। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন স্থানে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাঁরা ব্যর্থ হলে কেন্দ্র চেষ্টা করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বহিষ্কার করার ব্যাপারে তাঁরা ভাবছেন না। তৃণমূলের নেতাদের দলের প্রতি অনেক অবদান আছে। তাঁদের আস্থায় এনে বুঝিয়ে কাজ করা দরকার। তাঁরা দলের স্বার্থ বুঝবেন।’

পৌর নির্বাচন নিয়ে গতকাল সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত মো. শাহজাহান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট নয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনাগুলো কমিশনের নজরে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলকে আজ-কালের মধ্যে কমিশনে পাঠানোরও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সাভার ও মৌলভীবাজার পৌরসভায় তাঁরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে জনপ্রিয় দুই প্রার্থী নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন। মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিমে দলের কোনো নেতাই প্রার্থী হতে চাননি। ফেনীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা। বিএনপিকে ভাবাচ্ছে কেন নেতারা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন না। শুধু কি ভয়ভীতি, হামলা-মামলা না কি এর পেছনে আরও কোনো কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখার কথা ভাবা হচ্ছে। ওই নেতা বলেন, বিএনপির মতো একটি বড় দলের অনেকে প্রার্থী হতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংখ্যায় ১৮-২০টি পৌরসভায় প্রার্থী-সংকট হলেও তাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। আরও সময় তাঁদের হাতে আছে। শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী দলের জন্য বড় সমস্যা নয়।