ঢাকার বাতাসে বিষাক্ত ধুলা

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে খানাখন্দে ভরা রাস্তা, তার ওপর যোগ হয়েছে অসহনীয় ধুলা। ছবিটি সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারীর ফোল্ডার স্ট্রিট এলাকা থেকে তুলেছেন আবদুস সালাম
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে খানাখন্দে ভরা রাস্তা, তার ওপর যোগ হয়েছে অসহনীয় ধুলা। ছবিটি সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারীর ফোল্ডার স্ট্রিট এলাকা থেকে তুলেছেন আবদুস সালাম

রাজধানী ঢাকা যেন ধুলার নগর। নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে বিষাক্ত ধুলা। ধুলাবালু কমাতে সড়কে নিয়মিত পানি ছিটানোর নিয়ম আছে, কিন্তু তা করা হয় না। ভাঙাচোরা সড়ক এবং নতুন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করায় বাড়ছে ধুলার প্রকোপ। এতে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়ছে।
জানতে চাইলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক বরকত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এমনিতেই বেড়ে যায়। ধুলার কারণে এসব সমস্যা বাড়ছে। নতুন করে অনেকে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরা, ফার্মগেটসহ অন্তত ১০টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় গ্যাস, পানি, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি পরিষেবার ভূগর্ভস্থ সংযোগ মেরামতের জন্য সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। উন্নয়নকাজের কারণে ধুলার পরিমাণও বাড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরের অন্য সময়ের (এপ্রিল-অক্টোবর) চেয়ে শীতে (নভেম্বর-মার্চ) সূক্ষ্ম বস্তুকণার কারণে (পার্টিকেল ম্যাটার বা পিএম-২.৫-এর নিরিখে) বায়ুদূষণের মাত্রা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। এ সময়ে বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা বা পিএম ২.৫ অস্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। শীতকালে অপেক্ষাকৃত স্থূল বস্তুকণার মাত্রাও অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘নির্মল বায়ু এবং টেকসই পরিবেশ’ প্রকল্পের আওতায় ওই প্রতিবেদন তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে নির্মাণকাজে পানি ব্যবহার করা হয় না। শীতকালে বৃষ্টিও হয় না। ফলে দ্রুত ধুলাবালু ছড়িয়ে যায়। ঢাকার সূক্ষ্ম ও স্থূল বস্তুকণা নির্ধারিত মানের চেয়ে বিপজ্জনক হারে বেশি। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, কল্যাণপুর ও রাজাবাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ প্রতিটি সড়কে নতুন পানির পাইপ বসানোর কাজ করছে। খনন করা মাটি রাস্তার ওপরেই রাখা হচ্ছে। এই মাটি পুরো সড়ক ও আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় পুরো এলাকা ঢেকে গেছে ধুলার চাদরে।
শীতকালে রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব কারণের মধ্যে আছে আশপাশে ইটভাটা, বৃষ্টিহীনতা, নির্মাণকাজ এবং প্রতিদিন রাস্তায় জমা ধুলা ঠিকমতো অপসারণ না করা। ধুলাদূষণ রোধে কার্যকর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রথম আলোকে বলেন, ধুলার প্রতিটি উৎসকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। ধূলিদূষণ রোধে ওয়াসা, রাজউক, সিটি করপোরেশনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ধুলার হাত থেকে বাঁচতে অনেকে মুখবন্ধনী পরে চলাফেরা করেন। ফেরি করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা এসব বন্ধনী বিক্রি করেন। মিরপুর-১০ নম্বরের মুখবন্ধনীবিক্রেতা মো. মিজান বলেন, ‘আগে বাদাম বিক্রি করতাম। ধুলা বাড়ায় কয়েক দিন ধরে মাস্ক বিক্রি করি। দিনে শ খানেক বিক্রি হয়।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সড়কে পানি ছিটানোর কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিবউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে ডিএসসিসির পাঁচটি পানির ট্রাক দিয়ে প্রতিদিন সকালে কিছু জায়গায় পানি ছিটানো হয়। আরও কিছু পানির ট্রাক আনার প্রক্রিয়া চলছে।