বিচার চেয়ে করা মানববন্ধনে আসামি!

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর গুলিতে প্রাণ হারান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাপস সরকার। ওই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করা হয়। আর ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন তাপস হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছাত্রলীগের কর্মী রাবিদ রায়হান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, তাপস সরকার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসি বা চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (বর্তমানে বিজয়) কর্মী। আর তাপস হত্যা মামলার আসামি রাবিদ রায়হান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) পক্ষের। সম্প্রতি রাবিদ ভিএক্স ছেড়ে বিজয়ে যোগ দেন।
রাবিদ রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিএক্স ও তৎকালীন সিএফসির মধ্যে সংঘর্ষের সময় শাহ আমানত হলের তৃতীয় তলায় থাকা সিএফসির তাপস সরকার নিহত হন। তিনি সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
তাপস হত্যা মামলা দ্রুত বিচারের দাবিতে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর অনুসারীরা। এতে তাপস হত্যা মামলার আসামি রাবিদ রায়হানও অংশ নেন। কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ফজলে রাব্বী ও সাবেক সহসম্পাদক রেজাউল হক।
ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আমরা তাপস হত্যা মামলার মূল আসামি আশরাফুজ্জামানকে গ্রেপ্তারসহ দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছি। এতে রাবিদ রায়হানও ছিলেন। তিনি (রাবিদ) তাপস হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন মনে করছি না।’
তাপস সরকার হত্যা মামলার বাদী হাফিজুল ইসলামের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে রাবিদ রায়হানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তাপস হত্যাকাণ্ডের পর শাহজালাল হল থেকে ভিএক্স পক্ষের ২৭ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছিল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রাবিদ রায়হানও ছিলেন। তল্লাশির সময় হল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় রাবিদকে আসামি করা হয়। আর তাপস হত্যার ঘটনায় ১৫ ডিসেম্বর রাতে তাপসের সহপাঠী হাফিজুল ইসলাম ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার ২৫ নম্বর আসামি রাবিদ।
অস্ত্র ও তাপস হত্যা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মুস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাবিদ রায়হান তাপস হত্যা মামলার আসামি। পাশাপাশি ওই সময় দায়ের হওয়া অস্ত্র মামলারও আসামি তিনি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর তাপস হত্যার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মামলা দুটির অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অভিযোগপত্রে রাবিদের নামও থাকতে পারে।’
তাপস হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারের প্রায় দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান রাবিদ। গত ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। এরপর রাবিদ সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে যোগ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু। বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স তাঁর পক্ষ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী। বিজয় (সাবেক সিএফসি) আছে তাঁর পক্ষে।