দিনাজপুরে ইস্কন মন্দিরে গুলি-বোমা, দুজন আহত

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের জয়নন্দ ডহচি গ্রামে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইস্কন) একটি মন্দিরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালে ওই হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন দুজন। দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে।
কাহারোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনসুর আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আহত ব্যক্তিরা হলেন রঞ্জিত চন্দ্র রায় (৪৫) ও মিঠুন চন্দ্র রায় (২৫)। তাঁদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মন্দির কমিটির সম্পাদক শ্যামল কুমার মজুমদারসহ কয়েকজন জানান, সন্ধ্যায় শ্রীশ্রী জগন্নাথ নামের ওই মন্দিরে ধর্মসভার প্রস্তুতি চলছিল। রাত পৌনে আটটার দিকে অতিথিরা আসন গ্রহণ করার সময় পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে ১৪-১৫ জন যুবক মন্দিরের কাছে পৌঁছে চারটি ককটেল নিক্ষেপ করেন। এর একটি বিস্ফোরিত হয়। এরপর ওই যুবকেরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ছয়টি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। একটি গুলি মিঠুন চন্দ্র রায়ের কোমরে বিদ্ধ হয়। আর দুটি গুলি রঞ্জিত চন্দ্র রায়ের পায়ে বিদ্ধ হয়।
উপজেলার মধুহারি ঢাকাইয়াপাড়া এলাকা থেকে রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় লোকজন শরিফুল ইসলাম নামের এক তরুণকে মোটরসাইকেল নিয়ে পালানোর সময় আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
স্থানীয় ডাবোর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, রঞ্জিত দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ইশানিয়া গ্রামের বিভূতি চন্দ্র রায়ের ছেলে এবং মিঠুন কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের দ্বিজেন চন্দ্র রায়ের ছেলে।
রাত ১০টার দিকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম এবং দিনাজপুর-১ (কাহারোল-বীরগঞ্জ) আসনের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। সর্বশেষ রাত ১২টা পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন।
এসপি মো. রুহুল আমিন একজনকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বলেন, তদন্ত চলছে। আশা করি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শিগগিরই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সব সময়ই বজায় থেকেছে। কিছু দুষ্কৃতকারী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা প্রশাসনিকভাবে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর মোকাবিলা করব।’
দিনাজপুরে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এ নিয়ে চারটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। গত ১৮ নভেম্বর সকালে জেলা শহরের মির্জাপুর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন গির্জার ধর্মযাজক ও চিকিৎসক ইতালির নাগরিক পিয়েরো পিচম। এরপর গত ৩০ নভেম্বর রাতে চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয় হোমিও চিকিৎসক বীরেন্দ্রনাথ রায়কে। তিনি ইস্কনের জেলা শাখার সভাপতি। আর গত শুক্রবার রাতে বোমা হামলা হয় কাহারোল উপজেলার ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাসমেলা উপলক্ষে আয়োজিত যাত্রাপালার প্যান্ডেলে। এতে আহত হন ছয়জন।