আজ পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন মন্ত্রীরা

নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠনের লক্ষ্যে আজ সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হতে পারে। এর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া।

গতকাল সোমবার একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ইতিমধ্যে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে বেশ কয়েকজন পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। অন্যরা আজ পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন।

তবে সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরই সেটি স্বাভাবিকভাবে কার্যকর হয়। এ কারণে পদত্যাগপত্রে কেউ তারিখ উল্লেখ করছেন না। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলতেও রাজি হচ্ছেন না।

কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সর্বদলীয় সরকার গঠনের ওপর নির্ভর করছে মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র কার্যকরের বিষয়টি। কারণ, বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে যাঁরা নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন, তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে না। বাকিদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশমতো যেকোনো কাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে করার জন্য প্রস্তুত আছি।’ এর বাইরে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। এর আগে গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে যেন সবাই পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর পর থেকেই পদত্যাগপত্র জমা পড়তে শুরু করে। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম পদত্যাগপত্র জমা দেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন আজ সোমবার পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

বন ও পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারলে আজই (গতকাল) পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।’

সরকারি সূত্রগুলো জানায়, সবাই পদত্যাগ করার পর সেখান থেকে কিছুসংখ্যক ও অন্যান্য দল থেকে কিছুসংখ্যক সদস্য নিয়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি এখনো চাইলে নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিতে পারে। তবে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকার মুখে মুখে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের কথা বললেও কার্যত বিএনপিকে সর্বদলীয় সরকারে আনার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বিএনপিও বলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন এবং সরকারে যাবে না তারা।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সরকার মনে করছে বিএনপি আন্দোলন করলেও তা সফল হবে না। এ জন্য বিএনপি না এলে তাদের বাদ দিয়েই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে। গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে দলের প্রার্থীদের কাছে মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।