বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ

বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ও বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি অভিযোগ করেছে, বিরোধীদলীয় নেতাকে নিরাপত্তাহীন করতে তাঁর বাসভবন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এটি খালেদা জিয়াকে নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জঘন্য অপচেষ্টা।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকার পর পুলিশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরপাকড় শুরু করে। এরপর হরতাল আরও ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে ৮৪ ঘণ্টা করা হয়। গতকাল থেকে শুরু হওয়া হরতাল শেষ হবে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায়।

হরতালের প্রথম দিনে গতকাল ঢাকায় বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে মাঠে দেখা যায়নি। শুধু যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে কয়েকবার সংবাদ ব্রিফিং করেন। স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশির ভাগ নেতা আত্মগোপনে আছেন। অনেকেরই ফোন বন্ধ। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান তাঁর বাসাতেই ছিলেন। সাংবাদিকদের ফোন ধরেছেন তিনি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম আছেন রাজধানীর একটি হাসপাতালে। অন্য সদস্যদের কেউ কেউ ফোন ধরলেও ঘন ঘন জায়গা বদল করছেন।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে চেয়ারপারসনের বাসার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে দলীয় নেতাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এমনকি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে আসার সময় তাঁর একজন উপদেষ্টা ও ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত শনিবারও খালেদা জিয়ার বাসার সামনে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। দলের কোনো নেতা খালেদার বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেননি। তবে ওই রাতে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়নি।

খালেদা জিয়ার বাসার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সরকারের। হরতালে বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তাঁর বাসায় বা বাসার সামনে এ ধরনের ঘটনা যেন ঘটতে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পানি সরবরাহ বন্ধ করার অভিযোগ: গতকালের সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার বাসায় খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কাউকেই বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। তাঁর আত্মীয়স্বজনদেরও গেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ফিরে চলে যেতে হয়। তিনি সাংবাদিক ও নানা সূত্রে এসব তথ্য পেয়েছেন বলে জানান।

জানতে চাইলে ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম কামরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ওয়াসার স্থানীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও আসেনি।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, রিজভীর এমন অভিযোগের পর সাংবাদিকেরা বলেন, শনিবার রাতেও পেশাজীবীদের কয়েকটি প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছে। উত্তরে রিজভী বলেন, কখনো কখনো কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম ও কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি যে খবর পাচ্ছেন, তাতে খালেদা জিয়ার বাসভবনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। তিনি গৃহবন্দী নাকি নজরবন্দী, তা জানতে চান রিজভী।

বিকেলে রিজভী এসব অভিযোগ করেন। এর আগে দুপুরে খালেদা জিয়ার বাসভবন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সেখান থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের তুলে নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ: নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় গতকালও ছিল অবরুদ্ধ। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রিজভী ছাড়া আর কোনো নেতা সেখানে নেই। তবে কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক ও অফিস সহকারীদের কেউ কেউ সেখানে আছেন।

গুলশানের কার্যালয়ের ভেতরেও কোনো নেতাকে কাল দেখা যায়নি। গত বৃহস্পতিবারের পর বিএনপি চেয়ারপারসন ওই কার্যালয়ে আর আসেননি। কার্যালয়ের সামনে এখন আর অতিরিক্ত পুলিশ নেই।