খালেদা জিয়াকে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল সরকারের

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে নেতা-কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রিয় করে ফেলার কৌশল নিয়েছে সরকার। তাঁর বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে যাতে বিএনপি ও জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘেঁষতে না পারেন, সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

একই লক্ষ্যে গত শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় পাঁচজন নেতাকে গ্রেপ্তার এবং আরও কয়েকজন নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিএনপিসহ ১৮-দলীয় জোটের নেতাদের গ্রেপ্তার-আতঙ্কে ফেলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা একত্র হয়ে যাতে বৈঠকে বসতে না পারেন, সে জন্য পুলিশের তৎপরতা ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার-আতঙ্কে রেখে দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরে রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে সরকার।

সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক মন্ত্রী ও নেতার সঙ্গে বলে এই কৌশল ও পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। তাঁরা জানান, আগামী বুধবার হরতাল শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে তৎপরতা চলবে। এরপর বিরোধী দল আবারও হরতাল বা এর চেয়ে কঠোর কোনো কর্মসূচি দিলে সরকার ধরপাকড় আরও বাড়াবে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, এখনই খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করা হবে না। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে তাঁর চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা রয়েছে। বিরোধী দলের পরবর্তী কর্মসূচি দেখে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিধান করা আমাদের দায়িত্ব। বিক্ষুব্ধ জনতা যাতে তাঁর বাড়িতে হামলা করতে না পারে, সে জন্যই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে সরকারের অপর একজন মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, চলমান চার দিনের হরতালে সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান চলবে। তবে খুঁজে খুঁজে নেতাদের ধরপাকড় করার ইচ্ছা আপাতত নেই। হাতের কাছে যাঁদের পাওয়া যাবে, তাঁদের গ্রেপ্তার করে অন্যদের চাপে রাখার চেষ্টা থাকবে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, বিরোধী দলের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের কাউকে কাউকে চাপ দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টাও থাকবে। ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হলে জামিনে ছাড়াও পেতে পারেন তাঁরা।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, হরতাল-নৈরাজ্য বন্ধ করে বিরোধী দল যদি আলোচনায় বসে এবং আর নৈরাজ্য না করার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে সরকার গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। আর বিরোধী দল যদি নৈরাজ্য অব্যাহত রাখে, তাহলে সরকার আরও কঠিন হবে।

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সরকার ২২ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। খালেদা জিয়া এই নির্বাচন বর্জন করবেন—এটা ধরে নিয়েই বিএনপিকে কোণঠাসা করে দলটির নেতাদের একাংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আর এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে খালেদা জিয়াকে দল ও জোটের নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের গোপন এজেন্ডা হচ্ছে বিএনপিসহ ১৮-দলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে রাখা। এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এ জন্যই সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে রাখার নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।