এক কোটি ৭০ লাখ টাকার মনোনয়নপত্র বিক্রি

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গতকাল সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ষ ছবি: প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গতকাল সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ষ ছবি: প্রথম আলো

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সকাল থেকেই বর্ণিল সাজে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র কিনতে আসেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
দলের মনোনয়ন কে পাবেন, তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নের আশায় দৃষ্টি আকর্ষণের সব ধরনের চেষ্টাই করতে দেখা গেছে। প্রথম দিনই ৬৭৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের ছয় আইনজীবী ও দুজন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রথম দিনে এক কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৮-দলীয় জোটের ৮৪ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে গতকাল সকাল ১০টা থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়, চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। সারা দিনই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীরা বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে এবং মিছিল-স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন। পুরো এলাকায় নিয়ে আসেন উৎসবের আমেজ। নৌকা আর মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর নামে স্লোগান চলে সারা দিন। প্রায় সবাই নিজ নিজ প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট বহন করেন। অনেকে মাথায় নৌকা ও প্রার্থীর ছবিসংবলিত কাপড় বেঁধে আসেন।
দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন ক্রয়ের মাধ্যমে শুরু হয় মনোনয়ন বিক্রয়-জমা কার্যক্রম। মনোনয়নপত্র বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক আসনে তরুণ, বিশেষ করে সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেক নেতা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সাবেক সাংসদেরাও প্রথম দিন মনোনয়নপত্র কেনেন। প্রতিটি মনোনয়নপত্রের মূল্য ২৫ হাজার টাকা।
গণতন্ত্রের পথ সুগম করার আহ্বান: মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এ দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। এবারের নির্বাচন হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। তাতে সব ভোটার অংশ নেবেন। কেউ যদি ভোটারদের নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের জন্য শুভকর হবে না। আশা করি বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের পথকে সুগম করবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এ প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আশা করি।’ তিনি জানান, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি বাংলাদেশ একটি নতুন সরকার পাবে।

দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে সৈয়দ আশরাফ বলেন, আওয়ামী পরিবারের প্রত্যেকের মনোনয়নপত্র নেওয়ার অধিকার আছে। তবে ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো যোগ্যদেরই মনোনয়নপত্র ক্রয় করার আহ্বান জানান আশরাফ।

প্রথম মনোনয়নপত্র প্রধানমন্ত্রীর জন্য: দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্য গোপালগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়নপত্র কেনেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এর মাধ্যমেই মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনের লক্ষ্যে নিজের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সাত বিভাগের জন্য করা আলাদা আলাদা বুথ থেকে প্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্র কেনা শুরু করেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পক্ষে এবং দীপু মনি নিজে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

দুপুরের দিকে ঢাকা-৪ (কদমতলী-শ্যামপুর) আসনে মনোনয়নপত্র নিতে কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে আসেন আওলাদ হোসেন। কাছাকাছি সময়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে আসেন ওই একই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দুইটার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অস্থায়ী প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে শুরু হয় মারামারি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি। প্রায় আধা ঘণ্টা চলে এই অবস্থা। পরে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বয়সে তরুণ মনিরুজ্জামান খান খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে মনোনয়নপত্র ক্রয় করে ফেরার সময় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এই আসনে দলীয় সাংসদ হলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। বয়স হয়েছে তাঁর। তরুণদের সুযোগ দেওয়া হবে—এই ভেবে মনোনয়ন কিনেছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিরোজপুর জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘তরুণেরাই আগামী দিনে দলের হাল ধরবে। সুতরাং তাঁরা স্থান ছেড়ে না দিলে কীভাবে আমরা বেড়ে উঠব।’

৬৭৮ মনোনয়ন ফরম বিক্রি: প্রথম দিনে সাতটি বিভাগের ৬৭৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দ আবুল হোসেন, শেখ ফজলে নূর তাপস, মুকুল বোসসহ ২১৫ জন, রাজশাহী বিভাগ থেকে আবদুল লতিফ বিশ্বাস, জিন্নাতুন নেসা তালুকদারসহ ৭৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে দীপু মনি, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সুবিদ আলী ভূঁইয়া, নূরুল ইসলাম, আ হ ম মোস্তাফা কামালসহ (লোটাস কামাল) ১০৩ জন, খুলনা বিভাগ থেকে আবদুল হাই, বীরেন শিকদার, ননী গোপাল, সোলায়মান জোয়ার্দারসহ ৯৫ জন, রংপুর বিভাগ থেকে আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রায় রমেশ চন্দ্র, সতীশ চন্দ্র রায়, আসাদুজ্জামান নূরসহ ৮০ জন, সিলেট বিভাগ থেকে শাহাব উদ্দিন, ইমরান আহমেদ, মহসিন আলীসহ ৫২ জন এবং বরিশাল বিভাগ থেকে স ম রেজাউল করিমসহ ৫৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

আর ২২ জন মনোনয়ন ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। প্রথম দিনে এক কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ক্রয় ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম চলবে। তবে প্রয়োজন হলে সময় আরও বাড়ানো হবে বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বাধীন ২৩ সদস্যের উপ-কমিটি মনোনয়ন বিক্রির কাজ করছে।