'৭০ পয়সার সুবিধাও পাই না'

‘বছরে ৭০ টাকা কর পরিশোধ করি। কিন্তু পৌরসভা থেকে ৭০ পয়সার সুবিধাও পাই না’—এ মন্তব্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. নূরুল হকের। একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা শান্তিময় ত্রিপুরা বলেন, তাঁদের এলাকায় চার বছর আগে নলকূপ স্থাপনের জন্য পাইপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু এর পানি পান করার ভাগ্য তাঁদের হয়নি। কারণ, শুধু পাইপই স্থাপন করা হয়েছে, নলকূপ লাগানো হয়নি।
সরেজমিন পৌরসভা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে নূরুল হক ও শান্তিময় ত্রিপুরার মতামতের প্রতিফলন পাওয়া গেছে। এখানকার মানুষ উন্নয়ন চান। তাঁদের বক্তব্য, এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয়। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।
২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল মান্নান এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাপফুল ত্রিপুরা বলেন, ‘শুধু ভোট আসলে আমাদের খবর নেওয়া হয়। ভোট শেষ হয়ে গেলে আর কেউ খবর রাখে না। পৌরসভা শুধু নামে, কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।’
পৌর এলাকার সেবা নিয়ে ভোটারদের অভিযোগের শেষ নেই। পুরো শহর অপরিচ্ছন্ন। নেই কোনো স্থায়ী টার্মিনাল। ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এটাকে কি পৌর শহর বলা যায়? কোনো নিয়মশৃঙ্খলা আছে? এবার সব প্রার্থীর একটা নির্বাচনী ইশতেহার চাই। তা না হলে ভোটকেন্দ্রেই যাব না।’
৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ফারুক এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গ্রামের আবদুল হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি। আর শুনতে চাই না।’
চৌধুরীপাড়া গ্রামের মো. মামুন বলেন, আবর্জনা পড়ে থাকে যেখানে-সেখানে। দুর্গন্ধের জন্য চলাফেরা করা যায় না। হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পৌর শহরের অবস্থা দেখে কাকে ভোট দেব, তাই ভেবে পাচ্ছি না। হাসপাতাল সড়কের কালভার্টটি
দেবে গেছে। যেকোনো সময় ধসে যাবে।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ঝালা গ্রামের কৃষ্ণ মোহন চাকমা বলেন, ‘গ্রামে ৫১টি চাকমা পরিবার বসবাস করে, কিন্তু রাস্তাঘাট কিছু নেই। আমরা শুধু কর দিই। ধলিয়া খালে সেতু না থাকায় বর্ষাকালে গ্রামে বন্দী থাকতে হয়।’
পৌর এলাকার সেবা নিয়ে ভোটারদের অভিযোগের বিষয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, ‘একে তো তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা, তার ওপর আমি বিরোধী দলের মেয়র ছিলাম। এলাকার উন্নয়নে স্বাভাবিক বরাদ্দ ছাড়া কোনো বিশেষ বরাদ্দ পাইনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে যা বরাদ্দ পেয়েছিলাম, তা দিয়েই যথাসাধ্য এলাকার উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। আমার অসমাপ্ত কাজগুলো আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত হলে অবশ্যই বাস্তবায়ন করবে।’
বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মো. বাদশা মিয়া দলের পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে সাবেক মেয়রের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেবেন। কাউন্সিলর, ভোটারদের সঙ্গে পরামর্শ করে এলাকার উন্নয়ন করবেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মো. শামছুল হক মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, মানুষ উন্নয়ন চায়। তিনি নির্বাচিত হলে পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত পৌরসভা গড়ে তুলবেন।