একদিকে স্বতন্ত্র মানিক অন্যদিকে সবাই

একদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মুরতুজা সরকার মানিক। অন্যদিকে বাকি আট প্রার্থী। পৌরসভা নির্বাচনের এ চিত্র দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিক অবশ্য বর্তমান মেয়র। তাঁকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন বাকি আট মেয়র প্রার্থী।
২০০৬ সালে ফুলবাড়ী খনিবিরোধী আন্দোলনে যে কজন ব্যক্তি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।
প্রসঙ্গত, ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চেষ্টা করে এশিয়া এনার্জি। তাদের সেই চেষ্টার প্রতিবাদে ২০০৬ সালে সাধারণ মানুষ আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলনে ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন মানিক। জনগণের আন্দোলনের মুখে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত হয় এশিয়া এনার্জি।
ফুলবাড়ীর সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মানিকের সঙ্গেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র দুজন প্রার্থীর অভিযোগ, বর্তমান মেয়র গোলাম মুরতুজা সরকার মানিক নির্বাচনী মাঠে প্রচুর টাকা ছড়িয়ে ভোটারদের তাঁর পক্ষে কাজ করাচ্ছেন। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুলবাড়ী আদর্শ কলেজের এক শিক্ষক বলেন, সবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মানিকের সঙ্গে। তাঁর কিছু অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকাই বেশি। তিনি পৌরসভার আয় বাড়িয়েছেন।
নিমতলা মোড়ের রিকশাওয়ালা করিম উদ্দিন বলেন, ‘হামার মানিকই ভালো। ওমার (তাঁর) সাথে সবার কম্পিটিশন। ওমরা হামার মতো লেবারের জন্য অনেক কাজ করচেন।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক মেয়র শাহাজাহান আলী সরকারের অভিযোগ, ‘সম্প্রতি ফুলবাড়ী পৌরসভায় ১৩টি নিয়োগ হয়েছে। প্রতিটি পদে ফুলবাড়ীর বেকার সন্তানদের নিয়োগ পাওয়ার হক ছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র চারটি পদে ফুলবাড়ীর লোকদের নিয়োগ দিয়েছে। বাকি নয়টি পদে মোটা টাকার বিনিময়ে অন্য এলাকার লোকদের নিয়োগ দিয়েছেন।’
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাদৎ আলীর অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। তবে মানিকের অবৈধ টাকার ছড়াছড়িতে ফুলবাড়ীর নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী এস এম আবদুল্লাহ নুরুজ্জামান বলেন, গত পাঁচ বছরে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ফুলবাড়ীবাসী। এবারের নির্বাচনে মানিকের অবৈধ টাকার ছড়াছড়িতে তাঁর মতো সাধারণ প্রার্থীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সাইফুল ইসলামও প্রায় একই অভিযোগ করেন।
অধিকাংশ প্রধান প্রার্থীরই অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গোলাম মুরতুজা সরকার মানিক তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, টাকা নয়, তাঁর প্রতি জনগণের ভালোবাসাই অন্যান্য প্রার্থীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুলবাড়ী রক্ষায় জনগণের পাশে থাকার কারণেই জনগণ তাঁকে মেয়র বানিয়েছে। তাঁর দাবি, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করে এর ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই দলমত-নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ তাঁর পাশে রয়েছে। বড় বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ক্ষমতা, টাকা ও প্রশাসন ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মানিকের ভাষ্য, পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার মাপকাঠি পৌরসভার আয়। যাঁরা অতীতে মেয়র ছিলেন, তাঁরা পৌরসভার আয় বাড়াতে পারেননি। দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের লোক দিয়ে কাজ করিয়ে লুটপাট করেছেন।