টাকা মেরে দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা উধাও

বগুড়া জেলা পুলিশের রেশন স্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) তযিমুল ইসলামের বিরুদ্ধে মালামাল তছরুপের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনি প্রায় আট লাখ টাকার মালামাল নিয়ে টাকা পরিশোধ না করে আত্মগোপন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ী ও এক ঠিকাদার।

চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তযিমুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। আর প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন শহরের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী উত্পলেন্দু দেব।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসআই তযিমুল ইসলাম বগুড়া পুলিশের রেশন স্টোরে ওসির দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ এক তদন্তে রেশন স্টোরের ২০ লাখ টাকার মালামাল তছরুপের ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপার তাঁকে মৌখিকভাবে চাপ দেন। কিন্তু তিনি তা না করে গত ২৫ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে আসা বন্ধ করে দেন। পরে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রেশন স্টোরের গুদামের তালা ভেঙে দেখা যায়, আগে তদন্তের সময় যেসব মাল পাওয়া যায়নি তা ঠিকঠাকমতো আছে।

এদিকে ২৯ অক্টোবর বগুড়া সদর থানায় এসআই তযিমুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন শহরের বড়গোলা এলাকার ব্যবসায়ী উত্পলেন্দু দেব। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ আগস্ট এসআই তযিজুল তাঁর (উত্পলেন্দু) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পুলিশ লাইনের জন্য ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের ৬০০ বোতল (তিন হাজার লিটার) সয়াবিন তেল সরবরাহ করতে বলেন। পরদিন ওই তেল সরবরাহ করার পর তযিমুল বিক্রয় রসিদের অপর পৃষ্ঠায় মালামাল বুঝে পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ‘টাকা পরে দেওয়া হবে’ লিখে সিল-স্বাক্ষর করে দেন। কয়েক দিন পর তিনি আত্মগোপন করেন।

পুলিশের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার অশোক কুমারও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, এসআই তযিমুল পুলিশের রেশন স্টোরের জন্য তাঁর কাছ থেকে প্রায় চার লাখ টাকার ডাল নিয়ে অর্থ পরিশোধ করেননি।

এদিকে রেশন স্টোরের মালামাল তছরুপ ও বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে তযিমুল ইসলামের রাজশাহী শহরের বাসা এবং গোদাগাড়ী উপজেলার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক দফা কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু এসব নোটিশের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তযিমুলের হদিস তাঁদেরও জানা নেই। এই অবস্থায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে ৫ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোজাম্মেল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে রেশন স্টোরের ২০ লাখ টাকার মালামাল তছরুপের ঘটনা ধরা পড়ায় তযিমুল আত্মগোপন করেন। কিন্তু পরে স্টোরে মালামাল ঠিকঠাক পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, আত্মগোপনে যাওয়ার আগে তিনি গোপনে মালামাল ঠিকঠাক করে রেখে গেছেন। তবে এখন জানা যাচ্ছে, তিনি পুলিশের ঠিকাদারসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মালামাল নিয়ে টাকা পরিশোধ করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ী মামলা করেছেন। এ ছাড়া কয়েকজন লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন।