সাঁথিয়ায় জামায়াতের ভোট কোথায় গেল?

পাবনার সাঁথিয়ায় জামায়াতের ভোট কোথায় গেল?—এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সাঁথিয়া পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকায়। কারণ মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর নিজ এলাকা হওয়ায় এখানে জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।
গত তিনটি পৌর নির্বাচনেই জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। অথচ এবার জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। দল-সমর্থিত প্রার্থী বকুল হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৩৪০ ভোট। জামায়াতের প্রার্থী এত কম ভোট পাওয়ায় সাঁথিয়া পৌরসভাজুড়ে চলছে আলোচনা- সমালোচনা।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতের ভোট ধানের শীষ ও নৌকা দুটি প্রতীকেই পড়েছে। তবে নৌকার তুলনায় ধানের শীষেই জামায়াতের ভোট পড়েছে বেশি। নিজেদের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা না দেখে জামায়াতের ভোট এভাবে অন্য প্রতীকে চলে গেছে বলে নেতা-কর্মীরা জানান।
সাঁথিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ১২ হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিরাজুল ইসলাম (নৌকা)। এবার নিয়ে তিনি টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির (ধানের শীষ) সিরাজুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৮ হাজার ৮০ ভোট। অথচ জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বকুল হোসেন মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৩৪০ ভোট। মেয়র পদের মোট ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছেন পঞ্চম।
সাঁথিয়া পৌর এলাকার বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে জামায়াত বারবার শক্তির পরিচয় দিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসন থেকে দুবার (১৯৯১ ও ২০০১) সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। গত তিনটি পৌর নির্বাচনেও জামায়াত প্রার্থী ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কিন্তু এবারের পৌর নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীর এমন ভরাডুবিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা। কারও কারও মতে জামায়াতের শক্তি সাঁথিয়ায় কমে গেছে। আবার কারও কারও মতে জামায়াত-সমর্থকেরা অন্য প্রতীকে ভোট দেওয়াতেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোটের আগে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালালেও প্রকাশ্য কোনো সমঝোতা হয়নি। বরং জামায়াতের প্রভাবশালী এক নেতাসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
জামায়াত প্রার্থীর ভোট এত কম পাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে এর ব্যাখ্যা দেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘এখানে নৌকা ঠেকাও সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছিল। আমাদের প্রার্থীকে নৌকা ঠেকানোর ব্যাপারে কর্মী-সমর্থকেরা যথেষ্ট শক্তিশালী বলে মনে করেননি। তাই আমাদের বেশির ভাগ ভোট ধানের শীর্ষে চলে যাওয়ায় আমাদের প্রার্থী এমন কম ভোট পেয়েছেন। তবে আমাদের কিছু কর্মী-সমর্থককে চাপ প্রয়োগ করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁদের ভোট নৌকায় নেওয়া হয়েছে। আর কোনো নেতা-কর্মী স্বেচ্ছায় নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন বলে এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।’
সাঁথিয়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তাঁদের ভোট আমি পেয়েছি। তবে তাঁদের কেউ কেউ হয়তো চাপে পড়ে ও ভয়ে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন। আসলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে আমার বিজয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু নজিরবিহীন কারচুপি করে আমাকে হারানো হয়েছে।’
বিজয়ী মেয়র মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কারচুপির অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আর জামায়াতের ভোট ধানের শীষ কিছুটা বেশি পেলেও আমার নৌকা প্রতীকও তাঁদের ভোট পড়েছে। বিশেষ করে আমার মহল্লার সিংহভাগ জামায়াত-সমর্থকের ভোট আমি পেয়েছি। তাঁরা আমার বিগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে ও ভালোবেসে আমাকে ভোট দিয়েছেন।’