জামালগঞ্জ কয়লাখনি থেকে গ্যাস আহরণের প্রক্রিয়া শুরু

দেশের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বেশি গভীরতার কয়লাখনিটি থেকে গ্যাস আহরণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে প্রায় এক কিলোমিটার গভীরতায় এই খনির অবস্থান। এখানে কয়লার মজুত প্রায় ১০০ কোটি মেট্রিক টন।
কয়লাখনি থেকে গ্যাস তুলে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে গৃহীত এই কার্যক্রমের নাম ‘কোল বেড মিথেন’, ইংরেজি আদ্যক্ষরে সিবিএম প্রকল্প। কয়লাসমৃদ্ধ দেশগুলো এই পদ্ধতিতে গ্যাস তুলে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। তবে বাংলাদেশে এটাই প্রথম সিবিএম প্রকল্প।
খনিটিতে কী পরিমাণ গ্যাস থাকতে পারে, তার কতটা উত্তোলনযোগ্য—এসব খতিয়ে দেখতে পেট্রোবাংলার নিযুক্ত ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মাইনিং অ্যাসোসিয়েটস প্রাইভেট লিমিটেড’ আজ থেকে কাজ শুরু করছে। তারা জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ ইউনিয়নের বড় মাঝিপাড়ায় প্রথম কূপ খনন করবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কয়লাখনিতে প্রাকৃতিকভাবেই গ্যাস জমা হয়। এগুলো সাধারণত মিথেন গ্যাস। কূপ খনন করে সেই গ্যাস তোলার পদ্ধতি হচ্ছে সিবিএম। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারতসহ অনেক দেশেই সিবিএম পদ্ধতি চালু আছে।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজ আগে থেকেই সিবিএম প্রকল্প গ্রহণের কথা বলে এসেছেন। সরকার এই প্রথম সিবিএম প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিল।
জামালগঞ্জ কয়লাখনিতে সিবিএম প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য মাইনিং অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে পেট্রোবাংলা চুক্তি সই করে গত বছরের ২১ জুন। ২২ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে। প্রকল্পের ‘মনিটরিং কনসালট্যান্ট’ মর্তুজা আহমেদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, খনিটিতে গ্যাসের পরিমাণ ও খনির অভ্যন্তরে গ্যাস চলাচলের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তিনটি কূপ খনন করা হবে। কয়লা ও গ্যাস খনিমুখেই পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সহায়তাপুষ্ট কয়লা অনুসন্ধান কর্মসূচির আওতায় ১৯৬২ সালে জামালগঞ্জ কয়লাখনিটি আবিষ্কৃত হয়। এখন পর্যন্ত দেশের পাঁচটি খনিতে আবিষ্কৃত মোট কয়লার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি মেট্রিক টন। দেশের অন্য খনিগুলোতে কয়লার অবস্থান যেখানে ১৫০ থেকে ৫০০ মিটার গভীরতার মধ্যে, সেখানে জামালগঞ্জে কয়লার অবস্থান ৬৪০ থেকে ১ হাজার ১৫৮ মিটার গভীরে। এ কারণে প্রচলিত সুড়ঙ্গ বা উন্মুক্ত পদ্ধতির কোনোটিই এই খনি থেকে কয়লা তোলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
জামালগঞ্জ খনি থেকে সিবিএম পদ্ধতিতে গ্যাস আহরণের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ।