জীবননগরে বোমা হামলায় একজন নিহত, আহত ৩

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাসপুরে জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের বোমা হামলা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে গ্রামের পূর্বপাড়া মসজিদের কাছে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হতাহত ও হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের অনুসারী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
নিহত ব্যক্তি হলেন গঙ্গাদাসপুরের মোহাম্মদ আলী (৫০)। আহত ব্যক্তিরা হলেন একই মহল্লার মো. শাহাবুদ্দীন (৭৫) ও তাঁর স্ত্রী মালেকা খাতুন (৫৮) এবং কাঙাল মণ্ডলের ছেলে আবদুল মোমিন (৩৮)। আহত ব্যক্তিদের প্রথমে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গঙ্গাদাসপুর গ্রামের কয়েক ব্যক্তি জানান, সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়ে কয়েক শ হতদরিদ্র পরিবার সেখানে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি একটি চক্র এখানকার বসবাসকারীদের হটিয়ে জমি দখল করে নেয়। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দারের হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো আবারও গ্রামে ফিরে বসবাস শুরু করে।
আহত শাহাবুদ্দীনের ছেলে রিপন হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর বাবা গঙ্গাদাসপুর পূর্বপাড়ার মসজিদের পাশে নিজের মুদি দোকানে বসে ছিলেন। দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে কয়েকজন গ্রামবাসী গল্প করছিলেন।
রিপনের অভিযোগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক মোল্লার মেজ ছেলে যুবলীগ নেতা মিল্টন হোসেনের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন দুর্বৃত্ত দোকান লক্ষ্য করে পরপর সাতটি বোমা হামলা চালায়। বোমার আঘাতে আহত ব্যক্তিদের ধারালো হাঁসুয়া ও ফলা দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। সবাই মারা গেছে ভেবে হামলাকারীরা চলে যায়। মোহাম্মদ আলীর পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বোমা হামলায় শাহবুদ্দীনের ডান পা ও মোমিনের বাঁ হাত উড়ে যায়। মালেকা বেগমেরও পেট ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে।
জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলের মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিন জানান, হামলায় আহত ব্যক্তিরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও তাঁর অনুসারী। দলীয় প্রতিপক্ষরাই তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি দাবি করেন, এ ধরনের একটি রক্তক্ষয়ী ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে আগেই জানানো হয়েছিল। পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি গোপালগঞ্জে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই হতাহত হওয়ার খবর জেনেছেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। লাশ উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিমঘরে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ছুফি উল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।