সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা

আর মাত্র এক দিন পর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পৌরসভায় ভোট। দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রতিপক্ষের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের মারধর, নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও বহিরাগত ব্যক্তিদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সব কটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও ভোটাররা।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী মীর মো. শাজাহানের সমর্থকেরা। পথে সিঙ্গাইর বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু নাঈম মো. বাশারের সমর্থকেরা শাজাহানের দুই সমর্থককে গাছের ডাল দিয়ে পেটান। এর পরের দিন দুপুরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোলড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে (ক্যাম্প) অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় শাজাহান ও তাঁর সমর্থকেরা একই এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে বাশারের সমর্থকেরা চাপাতি, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শাজাহান ও তাঁর সমর্থকদের ধাওয়া করেন। এ সময় ছবি তুললে বাশারের সমর্থকেরা স্থানীয় সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান। এ ঘটনায় শনিবার রাতে বাশার বাদী হয়ে শাজাহানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাইর থানায় মামলা করেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহী প্রার্থী শাজাহান অভিযোগ করেন, বাশারের সন্ত্রাসী কর্মীরা তাঁর সমর্থকদের মারধর করছেন। তাঁর সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নির্বাচন থেকে তাঁকে দূরে রাখতে তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাশার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁর লোকজন আমার নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে শাজাহান ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।’
এদিকে বিএনপির প্রার্থী খোরশেদ আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রতিপক্ষের লোকজন ভোটকেন্দ্রে না যেতে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনিও সংশয় প্রকাশ করেন।
গত শনি ও রোববার পৌরসভার বিনোদপুর, মধ্য সিঙ্গাইর, আজিমপুর, চর আজিমপুর, গোবিন্দল, গোলড়া, আঙ্গারিয়া ও ঘোনাপাড়া এলাকায় অন্তত ৩০ জন ভোটার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
তবে সিঙ্গাইর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
এই পৌরসভায় এবার মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই পৌরসভার ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগে দায়ের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। পরে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করা হয়। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আবার তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও ভোটারদের নিরাপত্তা রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে।