সুনামগঞ্জে শুরুই হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ

সুনামগঞ্জে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো জেলার কোনো হাওরে বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। তাই অকাল বন্যা বা পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান রক্ষার বিষয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকেরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শতাধিক হাওরে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এবার জেলার ৪০টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করবে পাউবো। এ জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ১৩ কোটি ৪০ লাখ এবং ঠিকাদারের মাধ্যমে আরও ৩০ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা। কাজের জন্য ২১১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। পিআইসি বিভিন্ন হাওরে বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করবে আর ঠিকাদারেরা করবেন নতুন বাঁধ তৈরি ও বাঁধ উঁচুকরণের কাজ। কাজের নির্ধারিত সময় হচ্ছে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
নীতিমালা অনুযায়ী, বাঁধের কাজ তদারকের জন্য জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও স্থানীয় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করে ১১ সদস্যের জেলা কমিটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি করে নয় সদস্যের উপজেলা কমিটি রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্যকে সভাপতি করে রয়েছে পিআইসি। বাঁধের কাজ করবে মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। পাঁচ থেকে সাত সদস্যের প্রতিটি স্থানীয় পিআইসিতে স্থানীয় সাংসদের মনোনীত একজন নারী প্রতিনিধিসহ একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, একজন শিক্ষক ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) একজন প্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মনোনীত একজন আনসার অথবা ভিডিপি সদস্য এবং পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রতিনিধি একজন সদস্য কমিটিতে থাকবেন। প্রতিটি পিআইসি সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারবে। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হলে উপজেলা কমিটির সুপারিশে নির্বাহী প্রকৌশলী পিআইসির কাজ স্থগিত অথবা বাতিল করতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, এবার পিআইসি গঠনে বিলম্ব হয়েছে। সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের নাম যথাসময়ে পাওয়া যায়নি। এর বাইরে স্থানীয়ভাবে কাজের পরিমাপ এবং প্রকল্পের বরাদ্দের বিষয়টি পাউবোর সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স দেখে অনুমতি দিলেই কাজ শুরু হবে। এখনো টাস্কফোর্স না আসায় বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার উপজেলার কোথাও এখনো বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। বাঁধের কাজে আমাদের সম্পৃক্ত করা হয় না। অথচ অকাল বন্যা বা পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসল হুমকির মুখে পড়লে জনগণের কাছে সবার আগে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়।’
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, ‘২০১৪ সালে জগন্নাথপুর উপজেলায় আমরা ১৬ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু করেছিলাম। এবার এখনো কাজ শুরু হয়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হলে সময়মতো কাজ শেষ করা যায় না। এ কারণে কৃষকেরা চিন্তায় আছেন।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, ‘আমরা বুঝি না হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এত উদাসীনতা কেন! প্রতিবছর এ সময় এলে আমরা চিৎকার করি। কিন্তু কখনো সময়মতো কাজ হয় না। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বাঁধের কাজ হলে সেই বাঁধ দুর্বল হয়। আর এসব দুর্বল মাটির বাঁধ অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাই সামলাতে পারে না।’
টিআইবির সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য পরিমল কান্তি দে বলেন, ‘হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের বিষয়টি নিয়ে পাউবোর সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকেও কথা হয়েছে। সময়মতো কাজ শুরু না হওয়া দুঃখজনক। হাওরের বোরো ধানের ওপর এলাকার লাখো কৃষকের জীবন-জীবিকা, স্বপ্ন জড়িয়ে আছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বাঁধের কাজে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হয়নি, এটা ঠিক। তবে কাজের সময় বাড়তে পারে। টাস্কফোর্স আসার পরই আমরা কাজ শুরু করে দেব। বিলম্বে শুরু হলেও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে শতভাগ কাজ আদায় করে নেওয়া হবে।’