গণিত ভালোভাবে বুঝলে যুক্তিভিত্তিক জ্ঞান বাড়বে

গণিতকে ভয় করলে চলবে না। ভীতি কাটিয়ে গণিতকে ভালোবাসতে হবে। আয়ত্ত করতে পারলে গণিতের চেয়ে সহজ কোনো বিষয় হতে পারে না। গণিতের বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝতে পারলে মেধার বিকাশ ঘটবে এবং যুক্তিভিত্তিক জ্ঞানের পরিসর বাড়বে।
পটুয়াখালীতে গতকাল সোমবার ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে আঞ্চলিক পর্ব উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. সামসুদ্দিন। সকাল নয়টায় পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ ধরনের শিক্ষামূলক ও সৃষ্টিশীল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত পটুয়াখালী অঞ্চলের গণিত উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে উৎসবটির ব্যবস্থাপনা করেছে প্রথম আলো। এতে সহযোগিতা করেন পটুয়াখালী বন্ধুসভার সদস্যরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এবাদুল ইসলাম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পটুয়াখালী শাখার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬০০ জন শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মূল পর্ব গণিত অলিম্পিয়াডে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চার বিভাগে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের একটি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
এরপর মূল মঞ্চে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে শিক্ষার্থীরা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ের ওপর বিভিন্ন ব্যতিক্রমী ও জটিল প্রশ্ন করে জিতে নেয় বই পুরস্কার। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন জাহিদ হোসাইন খান।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গণিত বিভাগের প্রধান ড. বেল্লাল হোসেন, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিনুর রহমান, একেএম কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান গৌতম কুমার দাস, সরকারি মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মতিয়ার রহমান। মজার মজার ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন আর অতিথিদের উত্তরের মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে উৎসব অঙ্গন। উৎসবে প্রথম আলো বন্ধুসভার সাংস্কৃতিক দল ‘আয় আয় আয় গণিতের আঙিনায়’ শীর্ষক গান পরিবেশন করে।
উৎসবে ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. এবাদুল ইসলামের হাতে আমন্ত্রিত অতিথিরা ও আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এরপর অতিথিদের বক্তৃতা পর্বে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান ড. বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আজকে এই খুদে গণিতবিদদের মধ্যে নতুন আলো দেখতে পাচ্ছি। ওরাই আগামী দিনে আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।’
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিনুর রহমান শিক্ষার্থীদের গণিতকে ভয় না করে নিয়মিত গণিতের চর্চা করার আহ্বান জানান।
উৎসবে স্বাগত বক্তব্য দেন বন্ধুসভা পটুয়াখালীর সভাপতি মিজানুর রহমান ও প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিনিধি শংকর দাস।
সমাপনী বক্তব্যের পর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণ। পটুয়াখালী অঞ্চলে বিজয়ী হয়েছে ৪০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিক শাখায় সাতজন, নিম্নমাধ্যমিক শাখায় ১০ জন, মাধ্যমিক শাখায় ১২ জন এবং উচ্চমাধ্যমিক শাখায় ১১ জন।
পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এবাদুল ইসলামসহ অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পদক, সনদ ও টি-শার্ট তুলে দেন।
আঞ্চলিক গণিত উৎসবের বিজয়ীরা ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় চতুর্দশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।