মন্ত্রীরা স্বপদে বহাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা কেবল পদত্যাগের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁরা স্বপদে বহাল থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেই পদত্যাগ হিসেবে বিবেচিত হবে না। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির একটি ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাঁদের পদত্যাগপত্র অনুমোদন না করা পর্যন্ত মন্ত্রীরা স্বপদে বহাল থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীদের পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ কয়েকটি মহলের মন্তব্যের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের তাঁদের পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলেছি এবং তাঁরা তা-ই করেছেন।’ ‘ইতিমধ্যে মন্ত্রীদের পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে’ বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, তাঁরা সংবিধান না পড়েই মন্তব্য করেছেন।

মন্ত্রীদের পদত্যাগের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাবেক প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি অনুমোদন না করায় দীর্ঘদিন তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন।’

নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের সময় ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করার আভাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কে মন্ত্রিসভায় থাকবেন কে থাকবেন না, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর।

শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে: বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের এমআরএ ভবন (ইস্টার্ন উইং), ছাত্রদের জন্য বিজয় একাত্তর হল, তরুণ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য সৈয়দ আবুল খায়ের ভবন, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য শহীদ মুনীর চৌধুরী ভবন, হল প্রভোস্টদের জন্য শহীদ এম এ মোকতাদির ভবন (প্রভোস্ট কমপ্লেক্স) এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু টাওয়ার।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে না এলে এ দেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ধারা ফিরে আসত না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও বাংলাদেশ ‘রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্বাগত ভাষণে বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব। শিক্ষিত জাতি গঠন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এ সরকারের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সহ-উপাচার্য সহিদ আকতার হুসাইনের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

সাদা দলের মানববন্ধন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী বলে পরিচিত সাদা দলের শিক্ষকেরা। প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে তাঁরা এ দাবি জানান।

‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

সমাবেশে সাদা দলের আহ্বায়ক সদরুল আমিন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংলাপ আহ্বান করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংবিধান জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে তা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে।

সমাবেশে সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক তাজমেরী এস এ ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমেদ, সাদা দলের শিক্ষক আখতার হোসেন খান, আবুল হাসনাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।