নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

সিলেটের জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নৌকায় শান্তি দেবে। নৌকা সমৃদ্ধি দেবে। নৌকা উন্নতি দেবে। নৌকায় এ দেশের মুক্তি এনে দেবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তবে কোন নির্বাচনের জন্য তিনি ভোট চেয়েছেন, তা উল্লেখ করেননি। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচন এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হওয়ার কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় সিলেটে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। বক্তৃতায় উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। আগামী দিনেও নৌকা মার্কাকে কখনো ভুলবেন না। নৌকায় আগামীতে ভোট দেবেন তো। হাত তুলে দেখান। হাত তুলে ওয়াদা করেন। হাত তুলে ওয়াদা করেন যে, নৌকায় ভোট দেবেন।’ এরপর উপস্থিত জনতা হাত তুলে তাঁকে দেখান।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের যখন উন্নতি হয়। মানুষ যখন শান্তিতে থাকে। আমরা দেখি একজনের মনে খুব অশান্তি দেখা দেয়। তিনি আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারেন। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন। তাঁদের হাতে কোনো মানুষই নিরাপদ থাকে না। তাঁদের মনে শুধু শান্তি নাই। আর সবাই শান্তিতে বসবাস করছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। আপনারা সজাগ থাকবেন। আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, কোনো ছেলে-মেয়ে ওই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের কাছে যেন যেতে না পারে। তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতা অর্থবহ করতে চাই।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা এনেছে। আর উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতায় আসে। তারা আসে লুটপাট করতে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ করতে। তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
জনসভা শুরুর আগে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠেই বিভিন্ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স, জৈন্তাপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সিলেট এপিবিএনের ব্যারাক ভবন, সিলেট জেলার ওসমানীনগর থানা ভবন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হোস্টেল ভবন, ৩০ শয্যাবিশিষ্ট খাদিমপাড়া হাসপাতাল, সিলেট সদর এমসি কলেজের মাঠের সীমানাপ্রাচীর ও গেট, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে রূপান্তর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের ফলক উন্মোচন করেন।
এ ছাড়া সিলেট আউটার স্টেডিয়াম, খসরুপুর বাজার জিসি-পৈলানপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন, হরিপুর জিসি-গাছবাড়ী জিসি সড়ক উন্নয়ন (কানাইঘাট অংশ), মৈয়াখালী বাজার-আর অ্যান্ড সুইচ (বারোহাল ইউপি অফিস) ভায়া হাটুবিল মাদ্রাসা সড়ক উন্নয়ন, নারী পুলিশ ডরমেটরি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শাহপরান থানা ভবন নির্মাণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা অফিস নির্মাণ, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন নির্মাণ, তামাবিল স্থলবন্দর নির্মাণ, হজরত গাজী বোরহান উদ্দিন (র.) মাজার তিনতলা ভিত্তিবিশিষ্ট মসজিদ, মহিলা ইবাদতখানা ও সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিলেট বিভাগ এবং সিভিল সার্জন, সিলেট কার্যালয় ভবন নির্মাণকাজ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সিলেট ইলেকট্রনিক সিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার এবং হজরত শাহ পরান (র.)-এর মাজার শরিফ জিয়ারত করেন।