বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইজারা

রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরের বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সবুজ বৃক্ষরাজি আর বুড়িগঙ্গা নদী মিলে পার্কটির পরিবেশ নয়নাভিরাম।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের কোলাহল ছেড়ে এই এলাকার সব শ্রেণির মানুষের নিশ্বাস নেওয়ার একমাত্র স্থান ছিল বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক। এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ায় তাও বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে পার্কটি রক্ষার দাবিতে আজ শুক্রবার সকালে ইকোপার্কের ভেতরে মানববন্ধন করবে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ‘বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক হেলথ সোসাইটি’। পার্কটি বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের তত্ত্বাবধানে ছিল।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ‘বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক: গাছের ছায়ায় নদীর মায়ায়’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
নদীর দখল ঠেকাতে এবং পরিবেশের উন্নয়নে ২০১২ সালের অক্টোবরে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাত একর জায়গায় ইকোপার্কটি নির্মাণ করেছিল বিআইডব্লিউটিএ। পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট ছিল পাঁচ টাকা। পার্কটি সপ্তাহে সাত দিনই সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইকোপার্কটি ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি পার্কটিতে নতুন করে বিভিন্ন রাইড নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। ফলে পার্কের সবুজ বৃক্ষরাজির অধিকাংশই ধ্বংস বা কাটা পড়বে। প্রবেশ টিকিটের মূল্য বাড়ানো হবে অন্তত ১০ গুণ। এতে করে মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকেরা পার্কটিতে আসতে পারবেন না। এখন দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন দর্শনার্থী এখানে আসেন। ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কজুড়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ, যা পার্ককে করেছে সৌন্দর্যমণ্ডিত। নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাড়ে রয়েছে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে)। দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও বসার জন্য পার্কের চারপাশে রয়েছে বেঞ্চ ও ছাউনি। এসব স্থানে বসেই নদী ও চারপাশের পরিবেশ দেখা যায়। পার্কের দক্ষিণ পাশে নদীতে নামার জন্য রয়েছে বড় ঘাট। দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে নদীর পাড়ে রয়েছে একটি সেতু, যেখানে দাঁড়িয়ে নদীর রূপ দেখছেন অনেকে।
বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক হেলথ সোসাইটিকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পক্ষে আজ মানববন্ধনে অংশ নেবেন সংগঠনটির সদস্য হানিফ শহিদ। তিনি বলেন, এই এলাকায় ইকোপার্ক ছাড়া আর কোনো মাঠঘাট নেই। ফলে ডায়াবেটিসের রোগীসহ হাঁটা ও বেড়ানোর একমাত্র স্থান এই পার্ক। তাই পার্কটি রক্ষায় অবিলম্বে ইজারা বাতিল করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. গুলজার আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয় থেকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এই পার্কটি ইজারা দেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷