রাজশাহীতে ৪ দিনে ৩৮ শিশুর মৃত্যু

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক মাস বয়সী মামুনা ইসলাম। পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে শিশুটি। গতকাল সকালে রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক মাস বয়সী মামুনা ইসলাম। পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে শিশুটি। গতকাল সকালে রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

তীব্র শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৮টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও শীতজনিত রোগে ভোগা মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছে। ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে নবজাতকেরা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল রোববার নগরে তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে আরও ৪০টি শিশু। শনিবার ৭৬টি এবং শুক্রবার ৬০টি শিশু ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুদের মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, এই শীতের মধ্যে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৮টি শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে গত শনিবার ১১, শুক্রবার ১২, বৃহস্পতিবার ৪ ও বুধবার ১১টি শিশু মারা গেছে। শনি ও শুক্রবার ৫ শিশু, বৃহস্পতিবার ৪ এবং বুধবার ৬ শিশুই নিউমোনিয়ায় এবং অন্যরা ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগে মারা গেছে।
গতকাল দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্টের কারণেই বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি যমজ শিশু নিয়ে রয়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর দুটি সন্তানই ডায়রিয়ায় ভুগছে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সানাউল হক মিঞা বলেন, ঠান্ডা ছাড়া অন্য অসুখেও শিশু মারা যাচ্ছে। তবে এ সময় ঠান্ডাজনিত রোগে যেমন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিসে আক্রান্ত শিশু বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যারা মারা যাচ্ছে, তারা বাইরে থেকেই মুমূর্ষু অবস্থায় এসে ভর্তি হচ্ছে।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকদের জন্য নির্ধারিত ৩৫টি বিশেষ শয্যায় ভর্তি ছিল ৩৬ জন। নবজাতক বিভাগের প্রধান মনীষা ব্যানার্জি প্রথম আলোকে বলেন, নবজাতকদের প্রায় সবারই নিউমোনিয়া। আর একটু বড় শিশুরা ভুগছে ব্রঙ্কিউলাইটিসে।
গতকাল যে ২৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছে, তার বড় অংশই শীতজনিত ঠান্ডা-কাশিতে ভুগছে। বহির্বিভাগের দেয়ালে শিশুদের সুস্থ রাখতে যে নির্দেশনা সেঁটে দেওয়া হয়েছে, তাতে লেখা আছে: শিশুদের পায়ে মোজা, গায়ে সোয়েটার ও মাথায় টুপি পরাতে হবে, সকালে ও সন্ধ্যায় শিশুকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে নেওয়া যাবে না, হালকা গরম পানিতে দুপুরবেলায় অল্প সময়ের মধ্যে গোসল করাতে হবে, শিশুরা পায়খানা-প্রস্রাব করার সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিতে হবে, শ্বাসকষ্ট, কাশি, দ্রুত শ্বাস নিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে; ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের বুকের দুধ ও পরিপূরক খাবার দিতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে গড়ে ৫০০ রোগী আসছে প্রতিদিন, তাদের শ দেড়েকই নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিসের রোগী্।
শুষ্ক আবহাওয়ায় রোগী বেড়েছে রাজধানীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেও। হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত রোগী বেড়েছে বলে জানান হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক বরকতউল্লাহ।