মানচিত্র পাল্টে যাওয়ার শঙ্কা

রাজশাহীর পবা উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী চরখিদিরপুর গ্রামের ১৮৭ হেক্টর ভূমি রক্ষা করতে না পারলে দেশের মানচিত্রই পাল্টে যাবে। গ্রামের জায়গাটি পড়ে যাবে পদ্মা নদীর মধ্যে। আর নদী মিশে যাবে ভারতীয় সীমানার সঙ্গে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চলে আসবে পদ্মা নদীর মাঝখানে। ওই এলাকার দখল হারাবে বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম হোসেন ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে এমন আশঙ্কার কথাই জানালেন। মাত্র কয়েক বছর আগে এই গ্রামের আয়তন ছিল ১ হাজার ৬৪২ হেক্টর। ভাঙনে ভাঙনে সেটি এখন মাত্র ১৮৭ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। এই এলাকায় এখনো পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের হাত থেকে এই অংশটুকু রক্ষা করতে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সেলিম হোসেন আরও বলেন, ১৬১ থেকে ১৬৪ নম্বর সীমানা পিলার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কিছু পিলার অর্ধেক ভেঙে গেছে, কিছু পিলার ভাঙনের মুখে। আর ১৬৪ নম্বর পিলারের পর থেকে অন্য পিলারগুলো বিলীন হয়ে গেছে। খিদিরপুরের পাশেই ছিল চর তারানগর গ্রাম। গ্রামটির আয়তন ছিল ৪৯৩ হেক্টর। এই গ্রামটি পুরোই বিলীন হয়ে গেছে। এই জলসীমার দখল নিয়ে নিয়েছে বিএসএফ। ওই এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়ে গেলে তারা বাধা দিচ্ছে। খিদিরপুর থেকে চার মাঝারদিয়াড় গ্রামের এই এলাকা দিয়ে নৌকা নিয়ে যেতেও বাধা দিচ্ছে বিএসএফ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিদর্শক দলে আরও ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল হক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মঞ্জুরে মওলা, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, স্থানীয় হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম, স্থানীয় বিওপি কমান্ডার ও পবা উপজেলার দুজন সার্ভেয়ার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে সরকারের নানা তৎপরতা দেখা গেলেও বর্ষা পার হলে আর তাদের কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যায় না। ভাঙনপ্রবণ এই এলাকায় একটি বিজিবি ক্যাম্প পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খানপুর ও খিদিরপুর দুটি গ্রামের অর্ধেক মানুষ গৃহহীন হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। খানপুর, খিদিরপুর ও মাঝারদিয়াড়—তিনটি বিজিবি ক্যাম্পই ছিল রাজশাহীর পবা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রামে। ইতিমধ্যে সীমান্তের পাঁচটি গ্রামের মধ্যে তারানগর ও নবীনগর পদ্মা নদীর ভাঙনে সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে। এখন শুধু মাঝারদিয়াড়, খিদিরপুর ও খানপুর গ্রামের অবশিষ্টাংশ রয়েছে। এই তিন গ্রামের এখন প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস।
সাবেক ইউপি সদস্য আবু আলম বলেন, নদীর ভাঙন থেকে এই গ্রাম তিনটাকে বাঁচাতে না পারলে বাংলাদেশ ভূখণ্ড হারাবে। আর পদ্মা নদী ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হবে। বাংলাদেশ মাটিও হারাবে, নদীর দখলও হারাবে। এখনই এটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালের বন্যার পরে একটি নদীর তীর রক্ষার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সেটা পরিকল্পনা কমিশন হয়ে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা মাস দুয়েক আগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।