মিটারের তোয়াক্কা না করে চলছে সেই স্বেচ্ছাচারিতা

সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে না গেলে এবং স্বল্প বা দীর্ঘ যেকোনো দূরত্বে যেতে না চাইলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে চালকদের এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বিআরটিএর এই ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা বলছে, মিটারের মাধ্যমে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টিকে তোয়াক্কাই করছেন না অটোরিকশার চালকেরা। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চলছে তাঁদের সেই স্বেচ্ছাচারিতা।

যাত্রীদের প্রশ্ন, বিআরটিএ যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলে অটোরিকশার চালকেরা কেন নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছেন না। তাঁদের ভাষ্য, হয় চালকেরা বিআরটিএকে তোয়াক্কা করেন না, নয়তো বিআরটিএর নেওয়া ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। ঢাকায় অটোরিকশার চালকেরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন, যেকোনো দূরত্বে যেতে চান না।

বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিআরটিএ দপ্তরে জমা পড়া বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে ৫৫টি অভিযোগের শুনানি শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তারা। এ ছাড়া প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বিআরটিএ। যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠনও বলছে, তারা সম্প্রতি ৫০০টি সিএনজি অটোরিকশা পরখ করে দেখেছে, এগুলোর মধ্যে ৭৮ শতাংশই এখন মিটারে চলছে না। অথচ নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর প্রথম এক সপ্তাহে অটোরিকশা পরখ করে সংগঠনটি দেখেছিল, ৭৫ শতাংশই মিটারে চলছে।

বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের পরিচালক বিজয়ভূষণ পাল বলেন, মিটারে না যাওয়া ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে না চাওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৫ জানুয়ারি বিআরটিএর এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৮টি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ডাম্পিংয়ে (ভাগাড়ে) পাঠান। একই সঙ্গে ১৯ জন চালককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। পরের দিন ২৬ জানুয়ারি ২৬টি অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয় এবং ৩২ জন চালককে দণ্ড দেওয়া হয়। এটি শুধু দুই দিনের হিসাব। প্রতিটি যানবাহনের অনিয়ম ধরার জন্য বিআরটিএ প্রতিদিনই পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। প্রতিদিনই চালকদের জরিমানাসহ অটোরিকশা ডাম্পিং করা হচ্ছে।

বিআরটিএর এই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেটা দৃশ্যমান নয়। যখন অতিরিক্ত বাস ভাড়ার নৈরাজ্য নিয়ে মিডিয়া তৎপর ছিল, তখন বিআরটিএও তৎপর ছিল। মিডিয়া থেমে যাওয়ার পর বিআরটিএও থেমে গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকাশার ব্যাপারেও তা-ই ঘটছে। তারা বলছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু তা দৃশ্যমান নয়। এবং তাদের কার্যক্রম কোনো প্রভাবও ফেলছে না। এতে চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলছে।

রাজধানী ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন ভাড়ার হার ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। নতুন ভাড়া অনুযায়ী অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। প্রতি এক মিনিট ওয়েটিংয়ের (যাত্রাবিরতি, যানজট ও সিগন্যাল) জন্য দুই টাকা। মালিকের জমা ৯০০ টাকা। ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সরকার জোরগলায় ঘোষণা দেয়, এখন থেকে ঢাকায় সব অটোরিকশা মিটারে চলবে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পরও অনেক চালকই তা মানছেন না।

রিয়াজুল ইসলাম নামের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ভাগ্য ভালো থাকলে মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে রাজি হয়—এমন অটোরিকশা পাওয়া যায়। কিন্তু ২০-৩০ টাকা বেশি দিতেই হয়। প্রথম প্রথম অটোরিকশায় ওঠার আগেই চেয়ে নিত। এখন অটো থেকে নামার পর বলে, ‘আগে বলিনি। আমার মিটার নষ্ট। আপনার যদি মনে হয় কিছু বাড়িয়ে দিয়েন।’ কিন্তু সন্ধ্যার পর মিটারে যেতে কোনো চালকই রাজি হন না। এ ছাড়া দিনে স্বল্প দূরত্বে অনেক চালকই মিটারে চলতে রাজি হন না।

এ বিষয়ে বিআরটিএর সচিব মুহাম্মাদ শওকত আলী বলেন, অটোরিকশাগুলো যেকোনো দূরত্বে, যেকোনো গন্তব্যে মিটারে যেতে বাধ্য। যদি না যায়, তবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত অথবা দায়িত্বরত ট্রাফিককে জানানো হয়, সেই চালকের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া কেউ চাইলে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগও দাখিল করতে পারে।

অভিযোগ দাখিলের পদ্ধতি সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, কয়েকভাবেই অভিযোগ করা যায়। বিআরটিএর ওয়েবসাইটে (www. brta. gov. bd) বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ের ফোন নম্বর এবং ওই কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল ও ফোন নম্বর দেওয়া আছে। কেউ চাইলে ঘটনাস্থল থেকে সেসব নম্বরে ফোন করে অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করে অভিযোগ করতে পারে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন নম্বর, দিন, তারিখ এবং ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করে বিআরটিএর চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করা যাবে। বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সেই লিখিত অভিযোগ দেওয়া অথবা ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ফ্যাক্স বা ইমেইলে মেইল করা যাবে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি করে বিআরটিএ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।