ভোজ্যতেলের দাম আরও কমানোর চিন্তা

বাজার দর
বাজার দর

খুচরা বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯০ থেকে ৯৬ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ থেকে ৮৫ টাকা। আবার এক লিটার বোতলজাত (সুপার) পামতেলের দাম ৬০ থেকে ৬৩ টাকা, খোলা পামতেলের দাম ৫৬ থেকে ৬০ টাকা।
সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবই বলছে, এক বছর আগের তুলনায় সয়াবিনের দাম কমেছে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ, আর পামতেলের দাম কমেছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মাস খানেক আগে উভয় তেলের দামই লিটারে পাঁচ টাকা কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের গত অক্টোবরে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত এক বছরে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ১৯ শতাংশ, দেশে কমেছে ৬ শতাংশ। বিশ্ববাজারে ১০ টাকা কমলে বাংলাদেশে কমে ১ টাকা ১০ পয়সা। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরে চিনির দাম কমেছে ২৭ শতাংশ, কিন্তু বাংলাদেশে কমেছে ৫ শতাংশ।
ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কাজ করে ইনডেক্সমুডি নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইনডেক্সমুডির তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সয়াবিন তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এক টন তেলের দাম উঠেছিল তখন ১ হাজার ২৬৮ ডলারে। দেশের বাজারেও তখন ১৩৩ টাকা লিটারে বিক্রি হয় সয়াবিন তেল। গত সেপ্টেম্বরে প্রতি টন সয়াবিন ৫৯০ ডলারে নেমে ডিসেম্বরে আবার ওঠে ৬৭৭ ডলারে। বর্তমান দাম প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ৯৬ টাকা।
রাজধানীতে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার। যোগাযোগ করা হলে এই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ৭৩ থেকে ৭৪ টাকায়, আর পামতেল বিক্রি করছি ৫০ টাকায়। ভোক্তাদের কেন এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনে খেতে হচ্ছে, সরকার খোঁজ নিক।’
একই ঘটনা প্রযোজ্য আটা-ময়দার ক্ষেত্রেও। ভোক্তারা বলছেন, কোনো পণ্যের দামই বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমছে না। অথচ বিশ্ববাজারে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় বাজারে বেড়ে যায়।
ইনডেক্সমুডির তথ্য অনুযায়ী, তিন বছর আগে প্রতি টন গমের দাম ছিল ৩৫৮ ডলার। গত ডিসেম্বরে তা ১৬৪ ডলারে নেমে আসে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য বলছে, ওই সময় বাংলাদেশে প্যাকেটজাত আটার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি, আর খোলা আটার দাম ছিল ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা কেজি।
তিন বছর পর বর্তমানে গমের দাম অর্ধেকের বেশি কমলেও আটার দাম সেই অনুযায়ী কমেনি। প্যাকেটজাত আটা এখনো ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা কেজি এবং খোলা আটা ২৫ থেকে ২৭ টাকা কেজি।
যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোজ্যতেলের বিষয়টি নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ট্যারিফ কমিশন একটি কমিটি করে বিশ্লেষণ করছে, দাম আরও কমতে পারে কি না।’ অন্য পণ্যগুলোর দাম স্বস্তিদায়কই আছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারক দলগুলো ঠিকমতো তদারকও করছে বলে মনে করেন বাণিজ্যসচিব।
বাজারের নাম কলমিলতা: গতকাল বিকেলে রাজধানীর কলমিলতা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাশূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে পুরো বাজার। কথা হয় সোহাগ স্টোরের স্বত্বাধিকারী সোহাগ মিয়া (২২) এবং কাঞ্চনপুর জেনারেল স্টোরের কর্মচারী মো. আসিফের (৩০) সঙ্গে। উভয়েই জানান, কাঁঠালতলার মোড় ও উড়ালসড়কের নিচে দুটি অবৈধ কাঁচাবাজার হয়েছে। এ কারণে ক্রেতারা এই বাজারে আসছেন না।
আরেক স্টোর মালিক নূর হোসেন (৬৫) বলেন, ১১৯টি দোকান থাকলেও বর্তমানে চালু ২০ থেকে ৩০টি। অবৈধ বাজার দুটি উচ্ছেদ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং থানায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
বাজার কমিটির সভাপতি মিন্নত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ দেওয়ার পর অভিযান হয়। দু-তিন দিন ঠিক থাকে। এরপর আবার একই অবস্থা। আশঙ্কা হচ্ছে, দীর্ঘ বছর ধরে চালু এই বাজারটি কবে না উঠে যায়।’
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সিম ২০ টাকা, টমেটো ২০-৩০, মুলা ১৬, ওলকপি ২০, কাঁচা মরিচ ৩৫, লম্বা বেগুন ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা সবুজ মিয়া বলেন, ‘কারওয়ান বাজার কাছে হওয়ায় আমরা সামান্য লাভ করি। তবু ক্রেতা পাই না।’