বিএনপির জাতীয় সম্মেলন ১৯ মার্চ

আগামী ১৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটি সম্মেলনের জন্য তিনটি স্থানের কথা উল্লেখ করে যেকোনো একটিতে অনুমতির জন্য ইতিমধ্যে গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের কাছে আবেদন করেছে।
গতকাল শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্মেলনের এ তারিখ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের জন্য তিনটি জায়গার অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত করেছি। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য গণপূর্ত কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তার জবাব পেয়েছি। তারা বলেছে, তাদের দিতে আপত্তি নেই, এটা এখন পুলিশের অনুমোদনের বিষয়। পুলিশ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত জবাব দেয়নি।’
এদিকে দলের সম্মেলন সামনে রেখে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভারত সফরে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। আগামী ১২ ও ১৩ মার্চ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরামের দুদিনের সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন তিনি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ওই সেমিনারে অংশ নিতে খালেদা জিয়া ভারত গেলে সেখান থেকে ফিরতে ১৪ মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। আর ১৯ মার্চ দলের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। নেতাদের আশঙ্কা, খালেদা জিয়া দেশে না থাকলে সম্মেলনের আয়োজনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, তিনি সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন উপকমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নয়াদিল্লির গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরামের সেমিনারে বিএনপির চেয়ারপারসনের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বিএনপির জাতীয় সম্মেলনের কারণে ওই সময় তাঁর ঢাকায় থাকা জরুরি।
অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক শাখার একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ভারতে গেলে সেখানে তাঁর উপযুক্ত প্রটোকল নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা সংশয়ে আছেন।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলের জাতীয় সম্মেলনের স্থান নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে এক চিঠিতেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা উল্লেখ করে যেকোনো একটি স্থানের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারে তাদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে বিএনপিকে।
দলের দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, যেকোনো দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দুটি পর্ব থাকে। একটি উন্মুক্ত, আরেকটি রুদ্ধদ্বার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত জায়গায় এত অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে মঞ্চ-শামিয়ানা তৈরিসহ বিশাল আয়োজন দুষ্কর হয়ে পড়বে। এ ছাড়া রুদ্ধদ্বার পর্বের জন্য আরেকটি মিলনায়তনের প্রয়োজন পড়বে। ওই নেতার মতে, একই চিঠিতে তিনটি স্থানের নাম উল্লেখ করে আবেদন করা ঠিক হয়নি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির বলেন, সম্মেলন সামনে রেখে ইতিমধ্যে দলের কাউন্সিলর, জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে জেলা কমিটিগুলো দুজন নারী প্রতিনিধির নাম কাউন্সিলর হিসেবে কেন্দ্রে সুপারিশ করে পাঠাতে বলা হয়েছে। জেলা ও মহানগর কমিটিগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরসংক্রান্ত চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
দলের যেসব নেতা-কর্মী বিগত আন্দোলনসহ সরকারের নির্যাতনে এবং বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন, তাঁদের নামে জাতীয় সম্মেলনে শোক প্রস্তাব আনা হবে। সে জন্য নিহত নেতা-কর্মীদের নামের তালিকা ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রে পাঠাতে সব কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।