হাতির তাণ্ডব, আতঙ্কে রাত কাটছে নির্ঘুম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাখনেরচর গ্রামে প্রতিরাতেই তাণ্ডব চালাচ্ছে বুনো হাতির পাল। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বসতবাড়ি, নষ্ট করছে ফসলি জমি। আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে গ্রামবাসী। পুরো গ্রামে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ২৫ জানুয়ারি থেকে গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রতি রাতেই হাতির পাল গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে হাতির এ তাণ্ডব চললেও প্রশাসন তা রোধে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে গ্রামের কয়েক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।
মাখনেরচর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালুঘাট পাহাড়ি এলাকা থেকে গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ৩০-৪০টি হাতি গ্রামে ঢোকে। এরপর থেকে প্রতি রাতেই গ্রামে হাতি ঢুকে কারও না কারও বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে বা ফসল নষ্ট করেছে। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামের সাড়ে তিন হাজার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
প্রথম দিকে মশাল জ্বালিয়ে, হইচই করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানো হতো। কিন্তু এখন হইচই করলে ও ঢাকঢোল পেটালেও ভোর পর্যন্ত হাতির তাণ্ডব অব্যাহত থাকে।
গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ২৫ জানুয়ারি থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাতির পাল গ্রামের শতাধিক কৃষকের ২৫ বিঘা জমির সরিষা, ৫৫ বিঘার গম, ১৫ বিঘার মসুর ও কলাইয়ের খেত নষ্ট করেছে। কৃষক নূরুজ্জামান, জিয়াউর রহমান, বদিউর রহমান ও মোহাম্মদ তারেকসহ ছয়জনের সেচপাম্পের ঘর তছনছ করেছে। এ ছাড়া হাতির পাল ফরিদ মিয়া, মজিবুর রহমান, আফছর মিয়া, মোহাম্মদ আল আমিন, জহুরুল ইসলামসহ ১৩ জনের ঘর তছনছ করেছে।
আল আমিন গত শনিবার বলেন, হাতির পাল গ্রামের বেশির ভাগ ফসল নষ্ট করেছে বা খেয়ে ফেলেছে। এখন প্রতি রাতেই বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে হাতি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩০-৪০টি হাতি পূর্ব পাশ দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। ১৩ দিন ধরে গ্রামের মানুষ এক ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারেনি। হাতি কখন কার বাড়িতে ঢুকে পড়ে এই ভয়ে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
ডাংধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘মাখনেরচর গ্রামটি এখন হাতির বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাতির আক্রমণ চলছেই। কার্যকর ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের দাবি করে আসছি।’ গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ওই গ্রামে যান। সেই সময় গ্রামের শত শত মানুষ বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার দাবি তোলে। তিনি তা পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। হাতির আক্রমণ রোধে একটি জেনারেটরের মাধ্যমে বর্তমানে ১৫টি বাতি জ্বালানো হচ্ছে। আরও কমপক্ষে চারটি জেনারেটর প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বুধবার ওই গ্রামে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের দাবিদাওয়ার কথা শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষায় আরও জেনারেটর দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রামটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’