বদলে গেছে গাবতলী

অবৈধ পার্কিং বন্ধ হওয়ায় বদলে গেছে গাবতলী এলাকার দৃশ্যপট। যানজটমুক্ত হয়েছে সড়কটি l প্রথম আলো
অবৈধ পার্কিং বন্ধ হওয়ায় বদলে গেছে গাবতলী এলাকার দৃশ্যপট। যানজটমুক্ত হয়েছে সড়কটি l প্রথম আলো

টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী হয়ে আমিনবাজার সেতু পর্যন্ত সড়কটি পার্কিংমুক্ত থাকায় দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন যাত্রীরা। আগে এই পথটুকু পার হতে ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগত, এখন যাওয়া যাচ্ছে ৫-৭ সাত মিনিটেই। দূরের যাত্রী ও নগরবাসীদের প্রত্যাশা—এই অবস্থা যেন বজায় থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টেকনিক্যাল মোড় থেকে গাবতলী টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে দূরপাল্লার কোনো বাস রাখা হয়নি। এমনকি স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী ও সিটি বাসগুলোও টার্মিনালের ভেতরে রাখা হয়েছে। ফলে পুরো সড়ক এখন অবৈধ ও বিশৃঙ্খল পার্কিংমুক্ত। কোনো যানজটও ছিল না।
সাভার থেকে প্রতিদিন গুলশানের অফিসে আসা-যাওয়া করেন স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো যারা হেমায়েতপুর বা সাভার থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করি, তাদের জন্য এটি বিশাল স্বস্তির ব্যাপার। রাস্তার কোথাও কোনো যানবাহন দাঁড়িয়ে না থাকায় দ্রুতই জায়গাটুকু পার হওয়া যায়। আগে এত অল্প সময়ে গাবতলী পার হওয়ার কথা চিন্তাও করা যেত না।’
গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক গাবতলী টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশের রাস্তা যানজটমুক্ত করা হবে। সড়কে কোনো বাস, ট্রাক, মিনিবাস দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। পরে ২৯ ডিসেম্বর গাবতলী টার্মিনালে এক সভায় ১ জানুয়ারি থেকে কল্যাণপুর-গাবতলী হয়ে আমিনবাজার পর্যন্ত সড়ক অবৈধ পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করেন মেয়র আনিসুল হক।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিজেরাও চাই না গাড়ি রাস্তায় থাকুক। সিটি করপোরেশন থেকে বলার পরে আমরা উদ্যোগ নিয়ে মালিকদের গাড়ি সরাতে রাজি করিয়েছি। এখন কোনো গাড়িই রাস্তা দখল করে রাখা হচ্ছে না। গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতরে জায়গা কম। অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা আছে। এগুলো উচ্ছেদ করে দিলে গাড়ি রাখার জায়গা বাড়বে। টার্মিনালের পেছনে খালি জায়গা আছে, সেখানে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করে দিলে আর কখনোই সড়কে গাড়ি থাকবে না।’
আগে দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী নামিয়ে মাজার রোড, টেকনিক্যাল মোড় ঘুরে এসে গাবতলী টার্মিনালের সামনে দাঁড়াত। ফলে সারাক্ষণই এই এলাকায় যানজট লেগে থাকত। সেগুলো সরিয়ে ফেলায় সড়কে যানজট হচ্ছে না বললেই চলে।
টার্মিনালের সামনের সড়কে দীর্ঘদিন বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় ময়লা-আবর্জনা জমে গিয়েছিল। বাস সরিয়ে নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেসব আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। আগে মানিকগঞ্জ পথে চলাচলকারী ভিলেজ লাইন ও পদ্মা লাইনের ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি সব সময় টার্মিনালের বাইরের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকত। গতকাল দেখা যায়, সেগুলো টার্মিনালের ভেতরে বাস রেখে যাত্রী তুলছে।
দেখা যায়, মাজার রোড ক্রসিং ও গাবতলী বাস টার্মিনালের বাইরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুটি রেকার দাঁড়িয়ে আছে। সড়কের দুই পাশেই ডিএমপির পক্ষ থেকে কিছু দূর পরপর ‘গাড়ি পার্কিং সম্পূর্ণ নিষেধ’ লেখা নির্দেশিকা লাগানো।
ধামরাই-গুলিস্তান পথে চলাচলকারী গ্রামীণ সেবা পরিবহনের চালক মো. খোকন বলেন, ‘আগে গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল মোড়ে যেতে ৩০-৪০ মিনিট লাগত। এখন রাস্তা ক্লিয়ার থাকায় ৪-৫ মিনিটের বেশি লাগে না। যাত্রীরা খুশি, আমরাও খুশি।’
গাবতলী থেকে আবদুল্লাহপুর, নতুন বাজার পথে চলাচলকারী রবরব, নিউ পল্লবী সুপার, বসুমতিসহ কয়েকটি পরিবহনের বাস টার্মিনালের শেষ মাথায় সড়কের ওপরে রাখা হতো। সেগুলোও সড়ক থেকে সরিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বদলে যাওয়া গাবতলীর এই চিত্র স্বস্তি এনে দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। গাবতলীর গোলারটেক এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘ভেবেছিলাম কয়েক দিন পরেই পুরোনো চেহারায় ফেরত যাবে। কিন্তু এখনো সেটা হয়নি। আমরা সাধারণ জনগণ সব সময় এ রকম যানজটমুক্ত সড়কই চাই।’
ডিএনসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) এস এম মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে গাবতলী এলাকা পার্কিংমুক্ত রাখা হচ্ছে। টার্মিনালের ভেতরে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান আছে। গাড়ি রাখার সুবিধার্থে সব দখল উচ্ছেদ করা হবে।’