পাথরঘাটায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর, বটিয়াঘাটায় সংঘর্ষে আহত ১৫

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা গতকাল বরগুনার পাথরঘাটা শহরের গোলচত্বর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন l ছবি: প্রথম আলো
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা গতকাল বরগুনার পাথরঘাটা শহরের গোলচত্বর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন l ছবি: প্রথম আলো

ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বরগুনার পাথরঘাটা ও খুলনার বটিয়াঘাটায় গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাথরঘাটায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। তাঁরা আজ বুধবার পাথরঘাটা শহরে হরতাল ডেকেছেন।
এদিকে বটিয়াঘাটায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
পাথরঘাটার চরদুয়ানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গতকাল ভোট গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন এক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাঁর সমর্থকেরা। মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই প্রার্থীর নাম আবদুর রহমান ওরফে জুয়েল। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং চরদুয়ানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
দলীয় সূত্র জানায়, চরদুয়ানি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য গতকাল বিকেলে পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজে তৃণমূল নেতাদের ভোটাভুটি হয়। এ পদে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থী দুজন। তাঁদের একজন আবদুর রহমান, অন্যজন সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ। এতে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড কমিটির ১৮ এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির ৬৫-সহ ৮৩ সদস্যের মধ্যে ৮০ জন ভোট দেন। দুই প্রার্থীই সমানসংখ্যক ৩৯টি করে ভোট পান। দুটি ব্যালট অস্পষ্ট ছিল।
আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, ওই দুটি ব্যালটের একটিতে হাফিজউদ্দিনকে ভোট দেওয়া হয়েছে দেখিয়ে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিযুক্ত করেন।
সূত্র জানায়, হাফিজউদ্দিনকে বিজয়ী ঘোষণার পরপরই আবদুর রহমানের সমর্থকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা কলেজে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং গোলচত্বর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত শহরে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ করে আজ বুধবার পাথরঘাটা শহরে পূর্ণদিবস হরতালের ডাক দেন আবদুর রহমান।
সমাবেশে আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভোটে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বেলায়েত হোসেন গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ভোটে কোনো কারচুপি হয়নি। আবদুর রহমানের অভিযোগ মিথ্যা।
সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট হয়েছে। কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।’ আবদুর রহমানকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ সন্ত্রাসীদের পছন্দ করে না।’
বটিয়াঘাটায় সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল ছিল উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রার্থী চূড়ান্ত করার নির্ধারিত দিন। সকাল থেকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মিছিল নিয়ে বটিয়াঘাটা বাজারে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
প্রার্থী বাছাইয়ের একপর্যায়ে গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাদীউজ্জামান হাদী এবং সুরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এস এম ফরিদ রানার নেতৃত্বে প্রতিবাদ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আশরাফুল আলম, ভান্ডারকোর্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা উবায়দুল্লাহ, মিজানসহ অন্যরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বটিয়াঘাটা থানার ওসি মামুন-উর রশীদ বলেন, ইউপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়েছে। পরে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।