ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়!

রাজশাহীর পবা উপজেলায় দুই শিশু নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামিসহ আরও তিন আসামি গতকাল বুধবার জামিন পেয়েছেন। এর আগে গত সোমবার এই মামলার দুই আসামি জামিন পান। আইনজীবীরা বলছেন, মামলায় দুর্বল ধারা ব্যবহার করার কারণে আসামিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। মামলার বাদী শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
নির্যাতনে আহত দুই শিশু এখনো পবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বজনেরা জানিয়েছেন, দুজনের কেউই উঠে দাঁড়াতে পারছে না।
দুই শিশুকে নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সহযোগিতায় লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার গতকাল রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোজাম্মেল হক বলেন, গতকাল দুপুরে রাজশাহীর শিশু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মামলার প্রধান আসামি রাকিব এবং ফজলু মিঞা ও কমল। শুনানি শেষে বিচারক তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া পর্যন্ত আদালত তাঁদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এই তিনজনের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ৩২৩ ধারা দেওয়া হয়েছে। মামলায় জামিন অযোগ্য কোনো ধারা উল্লেখ না থাকায় বিচারক তাঁদের জমিন মঞ্জুর করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের একটি আলোচিত মামলার আসামিদের জামিন পাওয়ায় আমরা মর্মাহত।’ এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন আবেদন করবেন বলে জানান তিনি। আসাদুজ্জামান অভিযোগ করেন, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলায় অপহরণ ও নির্যাতনের ধারা যুক্ত করেননি।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও বাদীপক্ষের আইনজীবী দিলসেতারা চুনি বলেন, এই মামলার আসামিদের মধ্যে সেনা ও র্যা ব সদস্য রয়েছেন। এ কারণে মামলার ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। দুই শিশুকে তুলে নিয়ে ছয় ঘণ্টা আটক রাখা হয়েছিল। এখানে অপহরণের একটি ধারা আসবে। আবার তাদের যে নির্যাতন করা হয়েছিল, সে জন্য ৩২৪ ধারা যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ৩২৪ ধারা না দিয়ে সাধারণ মারধরের ধারা ৩২৩ দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষকে ছাড় দিতেই এই ধারা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রাজশাহী শিশু আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) রাশেদ উন নবী আহসান বলেন, দুই শিশুকে অপহরণের পর প্রধান আসামি রাকিবের বাড়িতে ছয় ঘণ্টা ধরে তাদের নির্যাতন করার কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়নি।
মুঠোফোন চুরির অভিযোগে গত শুক্রবার পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের একটি বাড়িতে ধরে নিয়ে স্থানীয় বাগসারা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জাহিদ হাসান ও ইমন আলীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ওই দৃশ্যের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। এ ঘটনায় জাহিদ হাসানের বাবা বাদী হয়ে বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত সেনাসদস্য নাসির উদ্দিন, র্যা বের সদস্য (পুলিশ কনস্টেবল) সাগরসহ ১৩ জনকে আসামি করে পবা থানায় মামলা করেন। ওই দিন আজিজুল নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই সেনা ও র্যা ব সদস্য ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। তাঁরা ওই নির্যাতনে নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের জামিন নিয়ে বের হয়ে যেতে দেখে জাহিদের বাবা ইমরান আলী কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইমরান আলী বলেন, ‘আসামিরা জামিনে মুক্তি পাওয়ায় পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা আরও চিন্তিত। তাঁরা (আসামিরা) জামিন পাওয়ার আগে থেকেই নানাভাবে আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিলেন।’
দুর্বল ধারা ব্যবহার করার অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও পবা থানার ওসি শরিফুল ইসলাম ফোন ধরেননি।