হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশু হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি)।
এ-সংক্রান্ত চিঠি গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের কাছ থেকে পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম।
বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের পাশে একটি ছড়া থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি জাকারিয়া শুভ (৯), তাজেল মিয়া (১১), মনির (৭) ও ইসমাইল হোসেন (৮) নামের চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা ১২ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হয়।
ওই শিশুদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ হওয়ার দিন এ-সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে ওই শিশুদের পরিবারের সদস্যরা থানায় যান। তখন দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রহমান ‘লেখার লোক নেই’ জানিয়ে তাঁদের পরের দিন আসতে বলেন। পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিখোঁজ চার শিশুর বাড়িতে যায় বিষয়টি তদন্ত করতে। শিশুদের সন্ধান না পাওয়ায় পুলিশ ১৬ ফেব্রুয়ারি অপহরণ মামলা নেয়। মামলায় কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
মামলার বাদী নিহত শিশু মনিরের বাবা আবদাল মিয়া বলেন, সন্দেহভাজনদের নাম তাঁরা ওসিকে জানিয়েছিলেন। ওসি বলেছিলেন, কাউকে ধরলে শিশুদের জীবিত পাওয়া যাবে না। এখন কাউকে ধরাও যাবে না। আবদাল মিয়া অভিযোগ করেন, শুরু থেকে পুলিশ তৎপর হলে হয়তো শিশুগুলোকে বাঁচানো যেত। মামলার এক দিন পরই ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই শিশুদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের এ ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পাশাপাশি শিশুদের পরিবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই হবিগঞ্জের এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করে দেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের সহকারী পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় ও হবিগঞ্জ কোর্টের পরিদর্শক কাজী কামাল উদ্দিন। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ওই চার শিশু হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত শনিবার সালেহ আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। গত সোমবার তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে এ মামলায় ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।