আ.লীগের আট নেতার নামে মামলা, বাদী জানেন না

ব্যানার ও ফেস্টুন লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কালাইর বাজার এলাকায় তোফাজ্জল হোসেন (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে দিয়ে একটি মামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলায় অসাবধানতাবশত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের আট নেতাকে আসামি করা হয়েছে। অথচ তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী ও মামলার বাদী খালেদা বেগম এ মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
মামলার আসামিরা স্থানীয় সাংসদ শওকত আলীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। নড়িয়ায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন সাংসদ শওকত আলী। অপর পক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হক।
নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালাইর বাজার গ্রামের তোফাজ্জল চুক্তিতে দিনমজুরের কাজ করতেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নড়িয়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য জয়নাল মাঝির নামে এলাকায় ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হচ্ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি তোফাজ্জলকে ব্যানার লাগানোর জন্য পাঠান জয়নাল মাঝি। কালাইর বাজার এলাকার সড়কে লোহার তৈরি একটি তোরণে উঠে ব্যানার লাগাচ্ছিলেন তোফাজ্জল। তোরণের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের তারে জড়িয়ে তিনি প্রাণ হারান। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে যায়।
১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ একটি কাগজে তোফাজ্জলের স্ত্রীর সই নেয়। ওই কাগজটি ছিল মামলার এজাহার। এতে অসাবধানতাবশত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে। মামলায় আসামি করা হয় নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সেন্টু বেপারী, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মনির বেপারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মিহির চক্রবর্তী, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির সরদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা শিকদার, উপজেলা যুবলীগের সদস্য জয়নাল মাঝি, ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত ছৈয়াল ও ভূমখারা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মনির হোসেনকে। ওই রাতেই অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের কবরস্থানে তোফাজ্জলের লাশ দাফন করা হয়।
পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের বাবা তোফাজ্জল চাকধ বাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তোফাজ্জলের স্ত্রী খালেদা বেগম রোববার বলেন, ‘সংসার চালাতে সে (তোফাজ্জল) অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করত। টাকার বিনিময়ে ব্যানার লাগাতে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় মারা গেছে, তাই কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি।’ থানায় আওয়ামী লীগের আট নেতার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনো অভিযোগ দিইনি। পুলিশ একটি কাগজে আমার সই নিয়েছে। ওই কাগজে কী লেখা রয়েছে জিজ্ঞেস করলে পুলিশ আমাকে জানায় আপনার স্বামী মারা গেছে তার একটি ডকুমেন্ট থানায় রাখতে হবে। তাই সই নেওয়া হচ্ছে। ওই কাগজটি আমাকে পড়ে শোনানো হয়নি। আমি জানতেও পারিনি কীভাবে মামলা হলো।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি আমেরিকাপ্রবাসী। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ১০ দিন আগে দেশে আসি। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে হয়রানি করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা এ মামলাটি দেওয়া হয়েছে।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম আলী মিয়া বলেন, ‘বাদীর সই করা এজাহার পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বাদী এখন কেন এসব কথা বলছে, তা আমার জানা নেই। আসামি পক্ষরা টাকা দিয়ে বাদীকে বিভ্রান্ত করতে পারে।’