ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে

আবু সুফিয়ান
আবু সুফিয়ান
রিহ্যাবের আয়োজনে নগরের হোটেল রেডিসনে চার দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হচ্ছে আজ। এই আয়োজনকে সামনে রেখে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন রিহ্যাবের সহসভাপতি এস এম আবু সুফিয়ান ও সিডিএর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) শাহীন উল ইসলাম খান। তাঁদের সাক্ষাৎ​কার নিয়েছেন মাসুদ মিলাদ ও সুজন ঘোষ

প্রথম আলো: ক্রেতাদের জন্য এবারের মেলার কী ধরনের সুবিধা থাকছে?

আবু সুফিয়ান: ‘গুণগতমানে আস্থা, নিশ্চিত নিরাপত্তা’—এই স্লোগান নিয়ে নবমবারের মতো এবার আবাসন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী স্টলগুলো নানা ছাড় দেবে। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এবারের মেলায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১০ শতাংশের কম সুদে গৃহঋণ দিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল দিয়েছে।

প্রথম আলো: আবাসন খাতের অবস্থা এখন কেমন?

আবু সুফিয়ান: আবাসন খাতে এখন আগের মতো স্থবিরতা নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকঋণ ও স্থায়ী আমানতের সুদের হার বেশি থাকায় তিন-সাড়ে তিন বছর ধরে এই খাতে সংকট ছিল। বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সমস্যা এ সংকট আরও বাড়িয়েছিল। এখন গ্যাসের সংযোগ না পেলেও অন্য সব সংকট অনেকটা কেটেছে। সুদের হার কমায় ও স্থায়ী আমানতের সুদ কমে আসায় এ খাতে ঝুঁকছেন গ্রাহকেরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার না থাকায় বিনিয়োগের আস্থাও বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। এ জন্যই আমরা এখন নতুন করে ভরসা পাচ্ছি।

প্রথম আলো: আবাসন খাতে এখন প্রধান সমস্যাগুলো কী?

আবু সুফিয়ান: এই খাত এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের সহায়তা দরকার। আমরা সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের জন্য প্রস্তাব করেছি। ফ্ল্যাট কেনার জন্য গ্রাহকদের এবং নতুন প্রকল্প নেওয়ার সময় আবাসন ব্যবসায়ীরাও যাতে এই তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পান, সে জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাচ্ছে। সরকার এগিয়ে এলে এ খাতে আরও গতি আসবে। আরেকটি হলো, জমির দাম এখনো বেশি। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও শহরতলিতে সরকারিভাবে জমি বরাদ্দ দেওয়া হলে আবাসন খাতকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

প্রথম আলো: চট্টগ্রামে ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা কমলেও এখনো মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। ফ্ল্যাটের দাম কমানোর কোনো সুযোগ আছে কি না?

আবু সুফিয়ান: ফ্ল্যাটের দাম কম থাকলে বিক্রিও বেশি হয়। সেটি হলে আবাসন ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। কিন্তু এ জন্য আগে জমির দাম কমাতে হবে। জমি মালিক ও আবাসন প্রতিষ্ঠানের অংশীদারি যৌক্তিক পর্যায়ে থাকতে হবে। পাশাপাশি নিবন্ধন খরচও বেশি। এটিও কমানো দরকার। তাহলেই ফ্ল্যাটের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

প্রথম আলো: আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ফ্ল্যাট বানাচ্ছে বেশি। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ছোট ফ্ল্যাট তৈরিতে কেন এগিয়ে আসছে না প্রতিষ্ঠানগুলো?

আবু সুফিয়ান: ছোট ফ্ল্যাট তৈরিতে খরচ বেশি পড়ে। ফলে দামও বেশি পড়ে। বড় ফ্ল্যাটে খরচ তুলনামূলক কম। এরপরও মাঝারি আকারের অর্থাৎ ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট সবচেয়ে জনপ্রিয়। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও জনপ্রিয় আকারের ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে বেশি। ছোট ফ্ল্যাট তৈরি করে অনেককে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে।

প্রথম আলো: প্লট-ফ্ল্যাট কিনে প্রতারণার অভিযোগ বহু পুরোনো। এই খাতে স্থবিরতার জন্য এসব ঘটনাকেও দায়ী করা হয়। রিহ্যাব এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

আবু সুফিয়ান: যেসব আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ আসছে, সেগুলোর সিংহভাগই রিহ্যাবের সদস্য নয়।

তবে রিহ্যাবের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা মেডিয়েশন অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস সেল নামে একটি তদারকি কেন্দ্র গঠন করেছি। এ পর্যন্ত রিহ্যাবের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে আটটি নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি চারটি প্রক্রিয়াধীন। ক্রেতাদের প্লট-ফ্ল্যাট কেনার সময় দেখে নেওয়া উচিত, রিহ্যাবের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান কি না। কারণ, রিহ্যাবের সদস্য হলে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে।