কোটি টাকার কাজের দরপত্র দাখিলে বাধা

ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর) আসনের সাংসদ শফিকুল আজম খানের ছোট ভাই রফিকুল আজম খানের নেতৃত্বে দুটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজের প্রায় কোটি টাকার দরপত্র দাখিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেন, রফিকুল আজম খান নিজে উপস্থিত থেকে লোকজন নিয়ে তাঁদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দেন। তাঁরা ভয়ে উপজেলা পরিষদের বারান্দায়ও যেতে পারেননি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে ৪৪ জন ঠিকাদার দরপত্র কিনলেও জমা পড়েছে মাত্র ছয়টি। উচ্চ দরে এগুলো জমা দিয়েছেন বাধাদানকারীরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মহেশপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার পদ্মরাজপুর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নলবিলপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য গত ২১ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ জন্য মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা। ১৯ নভেম্বর দুপুর একটা পর্যন্ত ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। ঝিনাইদহ এলজিইডি কার্যালয় থেকে ৩০টি, কোটচাঁদপুর কার্যালয় থেকে তিনটি ও মহেশপুর কার্যালয় থেকে ১২টি দরপত্র সংগ্রহ করেন ঠিকাদারেরা। কিন্তু মহেশপুর এলজিইডি কার্যালয়ে রাখা বাক্সে দরপত্র জমা দেওয়ার স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
একাধিক ঠিকাদার জানান, তাঁরা দরপত্র কিনে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে মঙ্গলবার জমা দিতে যান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পান রফিকুল আজম খান দলবল নিয়ে এলজিইডি কার্যালয় ঘিরে রেখেছেন। যাঁরা দরপত্র দাখিলের চেষ্টা করেছেন তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে। ফলে ভয়ে কেউ আর দরপত্র জমা দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার জানান, তিনি জোর করে বাক্স পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন ঠিকাদার জানান, বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। তাঁরা এসে কার্যালয়ের সামনে ভিড় না করতে বলে চলে যান। কিন্তু বাধাদানকারীরা সেখানেই অবস্থান করেন। ফলে ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দেওয়ার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন বলেন, ‘অফিসের বাইরে কে কী করেছেন তা বলতে পারব না। তবে অফিসের মধ্যে কোনো কিছু হয়নি।’ একটি মাত্র স্থানে দরপত্র জমা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশি তহবিলে কাজটি হচ্ছে। বিদেশি সংস্থাটির দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী এটা করা হয়েছে।
রফিকুল আজম খান বলেন, তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দরপত্র জমাদানে বাধা দেওয়ার কথা ঠিক নয়। ঠিকাদারেরা আলোচনা করে এভাবে দরপত্র জমা দিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে সরকারি দর থেকে সামান্য কিছু কম দরে দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিযোগিতা হলে অনেক নিম্নদরে দরপত্র জমা পড়ত। সে ক্ষেত্রে ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হতেন।