উপড়ে পড়া গাছচাপায় শিল্পী খালিদ মাহমুদের মৃত্যু

খালিদ মাহমুদ মিঠু
খালিদ মাহমুদ মিঠু

গত রোববার বিকেলে চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে নতুন ছবির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। প্রকৃতির গল্প নিয়ে এই ছবির নাম গাঙের মানুষ। গতকাল সোমবার সকালেও খাবার টেবিলে চিত্রনাট্যটি পড়েছেন তিনি। কথা ছিল দুপুরে বাসায় ফিরে আবার বসবেন। কিন্তু তা আর হলো না। চিত্রনাট্যটি পড়ে ছিল টেবিলের ওপর।
প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু (৫৬) আর নেই। নিউ এলিফ্যান্ট রোডের নিজ অফিস থেকে দুপুরে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। বেলা দুইটা নাগাদ ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ফুটপাতের একটি প্রকাণ্ড কৃষ্ণচূড়াগাছ শিকড় থেকে উপড়ে খালিদ মাহমুদ মিঠুকে বহন করা রিকশা চাপা দেয়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় রিকশাটি। রিকশাচালক আবদুল জলিল প্রাণে বেঁচে গেলেও রক্ষা পাননি মিঠু। আশপাশের পথচারীরা তাঁকে গাছের নিচ থেকে উদ্ধার করে দ্রুত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের চিকিৎসক সৌরভ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, খালিদ মাহমুদ মিঠু ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথার আঘাত ছিল গুরুতর। তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখনো মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
ঘটনার সময় খালিদ মাহমুদ মিঠুর স্ত্রী চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা ছিলেন রাজধানীর গুলশানে একটি অনুষ্ঠানে। তখনো তাঁকে জানানো হয়নি স্বামীর মৃত্যুসংবাদ। সেখান থেকে বাসায় ফিরে মৃতদেহ দেখে বাক্রুদ্ধ হয়ে যান তিনি। তাঁদের ছেলে আর্য্য শ্রেষ্ঠ এখন পড়াশোনা করছেন লন্ডনে। আজ মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ দেশে ফেরার কথা রয়েছে তাঁর। আর মেয়ে শিরোপা পড়ছেন ঢাকায়।
সন্ধ্যায় কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর কনকচাঁপা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর তো এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল না। এখনো ওর অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। ও ছিল দারুণ কাজপাগল। আমার এখন অনেক দায়িত্ব। ওর অসমাপ্ত কাজগুলো কীভাবে যে শেষ করব, বুঝতে পারছি না।’
এশার নামাজের পর ধানমন্ডির বাসায় খালিদ মাহমুদ মিঠুর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মরদেহ রাখা হয় স্কয়ার হাসপাতালের শবাগারে। পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাল বুধবার বিকেলে বনানী কবরস্থানে বাবা শামসুদ্দিন আহমেদের কবরে দাফন করা হবে তাঁকে। এর আগে সকাল ১০টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর কিছু সময়ের জন্য রাখা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। বনানী যাওয়ার পথে প্রথমেই তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে এফডিসিতে, এরপর শেষ জানাজা হবে চ্যানেল আই কার্যালয়ে।
১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়েছেন মামা প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা প্রয়াত আলমগীর কবিরের কাছে। তাঁর মা বেগম মমতাজ হোসেন প্রখ্যাত নাট্যকার।
খালিদ মাহমুদ মিঠু ছিলেন চিত্রশিল্পী। এ ছাড়া নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র, নাটক, টেলিছবি এবং অসংখ্য মিউজিক ভিডিও। দেশে ও বিদেশে একক, দ্বৈত এবং দলগত চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে খালিদ মাহমুদ মিঠুর। ২০১০ সালে প্রথম চলচ্চিত্র গহীনে শব্দ-এর জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এর চার বছর পর তিনি তৈরি করেন চলচ্চিত্র জোনাকীর আলো।