তরমুজের ফুল আছে ফল নেই

মাঠ ছেয়ে আছে লতানো তরমুজগাছে। ফুটেছে অসংখ্য ফুল। কিন্তু এর বেশির ভাগই পুরুষ। তাই ফল ধরেনি। হাতে গোনা কিছু স্ত্রী ফুলে ধরেছে ছোট আকারের তরমুজ। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে তরমুজের ফলন হয়নি। এতে অন্তত ৩০ জন কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ডাঙাপাড়া গ্রামের ওই কৃষকেরা প্রায় চার মাস আগে সুপ্রিম সিড, লাল তীরসহ বেশ কয়েকটি বীজ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে তরমুজবীজ কেনেন। পরে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে এসব বীজ বপন করেন। বীজ থেকে সময়মতো চারা গজিয়ে লতানো গাছে খেত ছেয়ে যায়। ফুলও ধরে। কিন্তু তরমুজ ধরে না। দু-একটি গাছে একটি-দুটি তরমুজ ধরলেও তা আকারে খুবই ছোট। বীজ কোম্পানির পরামর্শমতো কৃষকেরা ঠিক সময়ে সার, কীটনাশক দিয়েও কোনো ফল পাননি। এই চাষিদের কেউ জমি বর্গা নিয়ে, আবার কেউ বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
ডাঙাপাড়ার মাঠপাড়া এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকায় তিনি চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সুপ্রিম সিডস কোম্পানির গ্লোরি জাতের তরমুজবীজ বপন করেন। মৌসুম শেষ হতে চললেও একটি তরমুজও তিনি বিক্রি করতে পারেননি। এখন কী করবেন, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না।
একই এলাকার কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, ‘এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তরমুজের আবাদ করিছিলাম। এখন ঋণের টাকা শোধ করব কী করে, তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়িছি।’
কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাকিতে সার-কীটনাশক নিই খেতে দিইছিনু। এখন সেই দোকানি টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। খেতে তো ফলন নাই। টাকা কেমনে শোধ দিই।’
জানতে চাইলে সুপ্রিম সিডের উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রতন মিয়া বলেন, সারা দেশের কৃষকেরা তাঁদের তরমুজবীজ বপন করেছেন। তবে অন্য কোনো জেলায় এই বীজ বপন করে কোনো সমস্যা হয়নি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে গবেষক নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিঙ্কর চন্দ্র দাস বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বীজের গুণগত মান খারাপ হওয়ার কারণেই খেতে ফল আসেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বীজ প্রত্যয়ন বিভাগের। তবে তাঁর দপ্তরের কোনো কর্মকর্তার কোনো গাফিলতি থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।