রঙিলা দোয়েল পাখি

ঝরাপাতার মধ্যে খাবার খুঁজছে রঙিলা দোয়েল ষ ছবি: তানভীর খান
ঝরাপাতার মধ্যে খাবার খুঁজছে রঙিলা দোয়েল ষ ছবি: তানভীর খান

পুরোনো পুকুরটার উত্তর পাড়ে মাঝারি মাপের একটি উইয়ের ঢিবি। পুকুরটিতে চায়না পুঁটির চাষ করেছেন পুকুরের মালিক কোবাদ খন্দকার। চায়না পুঁটির কাছে উইপোকা আর ওদের ডিম-বাচ্চা প্রিয় খাদ্য।
সম্প্রতি তিনি উইয়ের ঢিবি ভাঙার পর পাতিহাঁসের ডিমের মতো গোটা কয় ডিম দেখে মুঠোফোনে আমাকে জানান খবরটা। গুইসাপের ডিম ওগুলো। কোবাদ আমার বাল্যবন্ধু, আমার গ্রামেই (সাতশৈয়া, বাগেরহাট) বাড়ি। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে খবর পেলাম, একটি কুকো এসে দু-তিনটি ডিম ফুটো করে খেতে শুরু করেছে। কোবাদ সেটিকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বটে, কিন্তু তার আগেই আরও ডিম খুঁজতে গিয়ে কুকো পাখিটি ঠুকরে মাটি সরিয়ে উইপোকাদের খেপিয়ে দিয়েছে। তাতে সুবিধা হয়েছে এক জোড়া রঙিলা দোয়েলের। উইপোকা এদের কাছে অতি উপাদেয় খাদ্য। টপাটপ উদরপূর্তি করছে তারা। এই যে রঙিলা দোয়েল দুটি, এরা হলো আমাদের শীতের এক পরিযায়ী পাখি। খুব সুন্দর এক রংচঙা পাখি। ইংরেজি নাম Scaly thrush. বৈজ্ঞানিক নামZoothera dauma। মাপ ২৭ সেন্টিমিটার।
আকার-গড়ন ও স্বভাব-চরিত্রে আমাদের দোয়েল বা কমলা দোয়েলের মতো। সুন্দর এই পাখিটির সারা শরীরে যেন বিচিত্র ছবি এঁকে দিয়েছেন কোনো চিত্রশিল্পী। চকচকে জলপাই-বাদামি রঙের পাখিটির গলা-বুক-পেটজুড়ে কালো রঙের বক্ররেখা সুবিন্যস্ত। মাথার তালু, পিঠ ও লেজের উপরিভাগটায় ছোট ও মাঝারি মাপের কালচে পালকগুলো যেন মাছের আঁশের মতো সাজানো। লেজের তলায় আড়াআড়িভাবে গোটা কয় কালচে-বাদামি রেখা টানা। ডানার প্রান্তে ও কানের পাশে একটা করে কালো টিপ বসানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ, আগার দিকটা কালচে। পা ও নখের রং গোলাপি।

বাংলাদেশের সব জায়গায় এদের দেখা মেলে না। তবে বাগেরহাট-খুলনা-পিরোজপুরে দেখা মেলে প্রতিবছরই।