ভাঁট ফুল

ভাঁট ফুল l ছবি: লেখক
ভাঁট ফুল l ছবি: লেখক

‘ভাঁট আঁশ শ্যাওড়ার বন
বাতাসে কী কথা কয় বুঝি নাকো, বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে;
পৃিথবীর কোনো পথে দেখি নাই আমি, হায়, এমন বিজন’
-জীবনানন্দ দাশ
ভাঁট গ্রামবাংলার চিরচেনা বনফুল। বসন্তের দিনে অনাগত সৌরভ নিয়ে সে ফুটে চলে গ্রীষ্ম অবধি। গ্রামের মেঠো পথে, পাহাড়ি বনের চূড়ায় কিংবা পাহাড়ি ছড়ার পাশে অঢেল ও প্রাণবন্ত হয়ে সে সাজে, পথিকেরে খানিক তার দিকে ফিরে তাকানোর জন্য। অজস্র মৌমাছি মধু আহরণে ব্যস্ত থাকে ভাঁট ফুলের থোকায় থোকায়। অযত্নে ও অবহেলায় সে পথপাশে, পতিত জমির কাছে জন্মে থাকে।
ভাঁটের বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum। ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল আছে।

.
.


ভাঁট মিয়ানমার ও ভারতীয় প্রজাতি। পলাশ, শিমুলের মতো বিশালত্ব না থাকলেও ভাঁট ফুলের সৌরভ বসন্তজুড়েই রাঙিয়ে যায় বন। কবির মনকে করে তোলে আরও কাব্যময়। ভাঁট ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। পাতার রস শিশুর জ্বর দূর করে।
ভাঁট ফুল দিয়ে অনেক এলাকার সনাতন ধর্মের লোকেরা ভাঁটি পূজার আয়োজন করে ফাল্গুনের শেষ দিনটিতে। তবে পূজা শুরু হয় মাসের প্রথম দিন থেকেই। ঘরের কাছে ভিটা তৈরি করে, চারপাশে গাছের কাণ্ড দিয়ে বর্গাকার ঘর তৈরি করে ভাঁট ফুল সংগ্রহ করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পূজা দেওয়া হয় এবং শেষ হয় ফাল্গুনের শেষ দিনে। সেদিন সকালে শিশুরা ভাঁট ফুল সংগ্রহ করে পূজামঞ্চে প্রার্থনা করে। এই পূজার মর্মকথা হলো, ভাঁট ফুল মাথায় নিয়ে জলে স্নান করার পর শিশুদের বিপদ ও রোগবালাই দূর হয়। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মহাজন গ্রামের নবগঙ্গা নদীর তীরে এক বাড়িতে গিয়ে কয়েক বছর আগে ভাঁটি পূজা দেখেছিলাম। এ পূজার নাম অঞ্চলভেদে ভিন্নও হতে পারে।