ঠাকুরগাঁওয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থীদের লোকজন যানবাহন নিয়ে এলাকায় শোডাউন দিচ্ছেন। তাঁরা মানছেন না প্রচারণায় মাইক ব্যবহারের আইন। তাঁরা দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছেন পোস্টার। পোস্টার-ব্যানারে দলীয় প্রধান ও প্রার্থীর ছবি ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও ব্যবহার করছেন তিন থেকে চারজনের ছবি।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার সকালে রানীশংকৈলের নেকমরদ, ধর্মগড়, রাতোর ও হরিপুরের আমগাঁও, গেদুড়া ও হরিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালানোর এসব চিত্র দেখা গেছে।
নেকমরদের বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল হোসেন, জামায়াতের প্রার্থী কাজী মুহ. মাকসুদুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল হকের সমর্থকেরা বসতবাড়িসহ ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। ধর্মগড়ে জামায়াতের প্রার্থী লোকমান হোসেন, আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম ও রাতোর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শরৎ চন্দ্র রায়, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহমান দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। ধর্মগড়ে শফিকুল ইসলামের পক্ষে বাইসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা গেছে। গেদুড়া ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী তরিকুল ইসলাম দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। এ ছাড়া আমগাঁও ইউনিয়নে প্রার্থীদের পোস্টার মসজিদের দেয়ালেও লাগানো হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রচারণায় শুধু দলীয় প্রধান ও প্রার্থীর ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি ও নাম ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু গেদুড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হামিদের পোস্টারে নিজের ছবির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি-সংবলিত পোস্টার-ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
আমগাঁও ইউনিয়নের যাদুরানী এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, প্রার্থীর সমর্থকেরা আচরণবিধি না বুঝেই দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে যান। আমগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রথমে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। তাঁকে দেখে অন্য প্রার্থীর সমর্থকেরাও পোস্টার লাগিয়েছেন।
নির্বাচনী বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রচারের জন্য একটি ও পথসভার জন্য একটি করে মোট দুটি মাইক ব্যবহার করা যাবে। একই সঙ্গে দুটি মাইক ব্যবহার করা যাবে না। মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার বেলা দুইটার আগে ও রাত আটটার পরে করা যাবে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নেকমরদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইকে দুটি করে মাইকের হর্ন লাগিয়ে প্রচারণা চালান কাজী মুহ. মাকসুদুর রহমান ও আবুল হোসেনের লোকজন। বেলা ১১টার দিকে ধর্মগড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে ‘নৌকা ছিল, নৌকা আছে’ গানের সঙ্গে উচ্চ স্বরে শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়। এ ছাড়া গেদুড়া, আমগাঁও, হরিপুর ইউনিয়নে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকালে নেকমরদ ইউনিয়নে কাজী মুহ. মাকসুদুর রহমানের প্রচারণার সময় দুটি মাইক জব্দ করে পুলিশ। এ ব্যাপারে কাজী মুহ. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘সব চেয়ারম্যান প্রার্থীই মাইকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের মাইক জব্দ না করে আমার মাইক জব্দ করা হয়। আইন সবাই মানলে আমিও মানতে বাধ্য।’
হরিপুরের বকুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু তাহের বলেন, ‘দেয়ালে পোস্টার লাগানো আমাদের ট্রেডিশন। এ জন্য কর্মীরা না জেনে কাজটি করেছেন। পোস্টারগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মো. নাহিদ হাসান বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের প্রতি আমাদের অবস্থান কঠোর। মঙ্গলবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নেকমরদে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
হরিপুরের ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’