'নির্যাতন' সইতে না পেরে ছেলে হত্যার জবানবন্দি

ছেলে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে কারাগারে আছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ভাটিসাভার গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম (৫০)। স্বজনদের তিনি বহুবার বলেছেন, ছেলেকে তিনি খুন করেননি। ‘নির্যাতন’ সইতে না পেরেই ওই জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
রফিকুলের সেই ছেলের নাম রবিন মিয়া (১০)। আহত অবস্থায় গত সোমবার সকালে কে বা কারা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে রেখে গেছে।
গত সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের একটি শয্যায় রবিনকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। সে প্রথম আলোকে বলে, প্রায় দুই মাস আগে তার বাবা (রফিকুল) তাকে ঢাকার একটি বাসায় (ঠিকানা বলতে পারেনি) কাজ করতে দিয়ে আসেন। কয়েক দিন পর ওই বাসার ছয়তলার ছাদ থেকে পড়ে সে মাথায় গুরুতর চোট পায়। এরপর তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হয়। এখানে তাকে কে নিয়ে এসেছে, তা সে বলতে পারেনি।
রবিনের শয্যার কাছেই ছিলেন তার বড় চাচা মো. হোসেন ও তাঁর স্ত্রী আছিয়া খাতুন। তাঁরা বলেন, লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে এখানে এসে দেখেন, এ তাঁদের ভাতিজা রবিনই। তাঁরা আরও বলেন, তাঁরা কয়েক দিন আগে কারাগারে গিয়ে রফিকুলের সঙ্গে দেখা করেছেন। তখন রফিকুল অঝোরে কেঁদে বলেছিলেন, রবিনকে তিনি খুন করেননি। এ কথা পুলিশকে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। তাঁকে ভয়াবহ ‘নির্যাতনের’ শিকার হতে হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই তিনি ছেলে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম খান বলেন, রবিনের মাথায় ও হাতে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওর অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রবিনের বড় ভাই নুরুল ইসলাম (১৪) বলে, সে কিশোরগঞ্জে একটি খাবারের দোকানে কাজ করে। তার ছোট ভাই রবিন নান্দাইল সদর ইউনিয়নের ঝালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। প্রায় দুই মাস আগে বাবা তাকে কোথায় নিয়ে যান। এরপর আর রবিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল থানার এসআই মো. ফিরোজ আহমেদ ওই সময় বলেছিলেন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহায়তা নিয়ে তিনি চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। জেলা ডিবির ওসি ইমারত হোসেন গাজী ৬ মার্চ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, গোয়েন্দা জালে আটক রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তাঁর ছেলে রবিনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। পরে ওই দিনই তাঁকে ময়মনসিংহের বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করলে তিনি সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে আদালতের আদেশে কারাগারে পাঠানো হয়। গত সোমবার নান্দাইল থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, লাশের ছবি দেখে রবিনের বড় ভাই নুরুল শনাক্ত করেছিল। পুলিশ তার কথায় বিশ্বাস করেছিল। ওসি আরও বলেন, এখন ঘটনাটি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ডাংরি এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটা থেকে এক শিশুর (১১) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোতালিব হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় ২ মার্চ ‘নান্দাইলে শিশুর লাশ উদ্ধার, পরিচয় নিয়ে রহস্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। ওই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ ৫ মার্চ রবিনের বাবা মো. রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মরদেহটি তাঁর ছেলে রবিন মিয়ার বলে জানিয়ে তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।