পিয়ন ক্লাস নেন যে বিদ্যালয়ে

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০০ শিক্ষার্থী জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। তিনিও অনিয়মিত। তাই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন বিদ্যালয়ের পিয়ন।

গত সোমবার বেলা একটার দিকে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, পিয়ন ইব্রাহীম ছাড়া কোনো শিক্ষক নেই। পঞ্চম শ্রেণিতে ২৪ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৫ জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা শ্রেণিকক্ষে বসে বসে দুষ্টুমি করছে। জানতে চাইলে তৃতীয় শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানায়, বিদ্যালয়ের পিয়ন ইব্রাহীম পড়া দেন আর নেন, বুঝিয়ে দেন না।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, সোমবার দুপুর ১২টায় ক্লাস শুরু হয়। তখন আপৎকালীন শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস দুই বিষয়ের পড়া দেন। এ সময় তিনি মুঠোফোনে কথা বলে কাটিয়ে দেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও প্রায় একই কথা জানায়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। নূরে জান্নাত একমাত্র শিক্ষক। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের প্রচণ্ড সংকট চলছে এক বছর ধরে। সম্প্রতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও নাহার বেগম নামের দুজন আপত্কালীন শিক্ষক নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরাও বেলা একটায় চলে যান। তাঁরা বিদ্যালয়ে আসার পরে ক্লাসে ঢুকে সব সময় মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু পিয়নই নন, তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে ক্লাস নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরে জান্নাত সপ্তাহে দুই দিনের বেশি বিদ্যালয়ে আসেন না। এলেও বেলা একটার মধ্যেই চলে যান। ক্লাসে ঢুকে ঠিকমতো পড়ান না।

অভিযোগ অস্বীকার করেন নূরে জান্নাত। সোমবার একটার পর বিদ্যালয়ে না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শরীর খারাপ ছিল। তাই বাড়ি চলে গেছি।’

সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সেমিনারে ভোলার সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বেশির ভাগই ভোলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন। এঁরা তদবির করে শহরে বা শহরের আশপাশে বদলি নিয়ে আসছেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ শিক্ষক আছে। কিন্তু গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট চলছেই।

সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (ক্লাস্টার প্রধান) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওই বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক। তিনজন শিক্ষক অন্যত্র প্রেষণে আছেন। অন্য শিক্ষক নূরে জান্নাতও বদলির জন্য তদবির করছেন। এ জন্যে সেখানে দুজন আপৎকালীন শিক্ষক (পুল) দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা যে বেশির ভাগ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এ রকম অভিযোগ তাঁর কাছে নেই।

জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইয়্যাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের প্রেষণের অনুমোদন ও বাতিলের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে হয়। এতে তাঁর কিছু করার নেই।