দখল ও দূষণ হচ্ছে ঢাকার সব লেক

ঢাকার অস্তিত্বের প্রয়োজনেই লেকের দূষণ ও দখল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কলাবাগানে পবা কার্যালয়ে ‘ঢাকার লেকসমূহের দূষণ ও দখল চিত্র’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
ঢাকার লেকের দূষণ ও দখল নিয়ে ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেছে পবা। এই পর্যবেক্ষণের আলোকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের আলোকে পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান বলেন, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য লেক একটি আদর্শ জলাধার। এসব উপযোগিতা বিবেচনা করে ঢাকার লেকগুলোর পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দরকার। কিন্তু ঢাকার লেকগুলো ক্রমেই দূষণ ও দখল হয়ে যাচ্ছে। আবদুস সোবহান বলেন, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের দিক থেকে ঢাকার লেকগুলোর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ঢাকা শহরের চারদিক নদীবেষ্টিত। প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এ ধরনের শহর পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু দূষণ, দখল, ভরাটের ফলে নদীগুলো আজ প্রায় মৃত। এ ছাড়া শহরে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। ভরাটের এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ শতভাগ নিম্নাঞ্চল হারিয়ে যাবে।
আবদুস সোবহান আরও বলেন, ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ঢাকার গুলশান-বারিধারা, গুলশান-বনানী, ধানমন্ডি, রমনা ও ক্রিসেন্ট লেকের পানির গুণাগুণ (পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন ও পিএইচ) পরীক্ষা ও দূষণ, দখল এবং ভরাট নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছে পবা। এই পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গুলশান, বারিধারা, বাড্ডা, কালাচানপুর এলাকার গৃহস্থালি বর্জ্য, পুরোনো ভবনের ভাঙা অংশ, ভবন মেরামত ও পুনঃসংস্কার থেকে সৃষ্ট বর্জ্য গুলশান-বারিধারা লেকে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট অংশে গাছ লাগিয়ে, নার্সারি গড়ে তুলে, চায়ের দোকান দিয়ে, বাঁশের ঘর ও আধা পাকা ঘর তুলে দখল করা হচ্ছে। এর মধ্যে কড়াইল বস্তি এলাকায় গুলশান-বনানী লেক ভরাট ও দখলের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বনানী, গুলশান, বারিধারা, বাড্ডা, কালাচানপুর এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পয়োবর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব এলাকার পয়োবর্জ্য লেকে ফেলছেন বাড়ির মালিকেরা।
পবার সাধারণ সম্পাদক বলেন, ধানমন্ডি লেকের ৩২ নম্বর রোডের সেতু থেকে ২৭ নম্বর রোডের সাম্পান ও কলাবাগান পর্যন্ত এলাকায় বর্জ্য ফেলে লেক ভরাট করা হচ্ছে। লেকের ভেতরের তিনটি দ্বীপের দোকান, পানশী, সাম্পান, ডিঙি, রবীন্দ্রসরোবরসহ বিভিন্ন খাবার দোকানের বর্জ্য ও লেককেন্দ্রিক পাবলিক টয়লেটসহ সব খাবার দোকানের পয়োবর্জ্য লেকেই ফেলা হয়। একইভাবে রমনা, ক্রিসেন্ট লেক, চন্দ্রিমা উদ্যান লেক দূষণ হচ্ছে। এতে সব লেকেই পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অথচ পানির ভালো গুণগত মানের জন্য পর্যাপ্ত দ্রবীভূত অক্সিজেনের প্রয়োজন। তাই ঢাকার লেকগুলো রক্ষায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেলিন চৌধুরী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তারিক হাসান, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার, মডার্ন ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।