সহিংসতায় প্রাণ গেল পাঁচজনের

অবরোধ ঘিরে জনমনে বিরাজমান আতঙ্ক যেন ফুটে ওঠেছে এই ছবিতে। চট্টগ্রামের কর্নেলহাট মোড় থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল
অবরোধ ঘিরে জনমনে বিরাজমান আতঙ্ক যেন ফুটে ওঠেছে এই ছবিতে। চট্টগ্রামের কর্নেলহাট মোড় থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল

সারা দেশে ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার সহিংসতায় সাতক্ষীরা, কুমিল্লার লাকসাম, বগুড়ায় ও সিরাজগঞ্জে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মাহমুদ হাসান ওরফে বাবু ও দেয়াড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে রিকশাচালক বাচ্চু মিয়া, সিরাজগঞ্জের পৌর এলাকার জগাইমোড়ে পথচারী সাকমান হোসেন। বগুড়ায় নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা
জেলার কলারোয়া উপজেলার আলাইপুর এলাকায় বেলা ১১টার দিকে পিকেটারদের হামলায় দেয়াড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান ওরফে বাবু (৩২) নিহত হয়েছেন।
নিহতের ভাই ও কলারোয়া উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আমানউল্লাহ দাবি করেন, তাঁর ভাই মাহমুদ ছলিমপুরের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে কলারোয়া শহরে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। পথে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের পিকেটাররা তাঁকে লাঠিপেটা করেন। প্রথমে তাঁকে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক রবিউল ইসলাম যুবলীগ নেতা মাহমুদ হাসানের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ভাইয়ের এই দাবি অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব মোল্লা বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা জড়িত নন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ দারা খান যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে কারা তাঁকে মারধর করেছে, এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
৩৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উপ-অধিনায়ক মেজর ফারুক আহমেদ জানান, কলারোয়ার দেয়াড়ায় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বাড়িতে ঢুকে দেয়াড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

 লাকসাম

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বেলা ১১টার দিকে লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন। তাঁরা কয়েকটি ককটেলেরও বিস্ফোরণ ঘটান। বাধা দিলে পুলিশের ওপর তাঁরা হামলা চালান। হামলার মুখে পুলিশের সদস্যরা দুটি দোকানের ভেতর আশ্রয় নিলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ অবস্থায় অবরোধকারীরা দূরে সরে যান।

অবরুদ্ধ পুলিশের সদস্যরা বেরিয়ে এলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। এতে অন্তত ১০ পুলিশ আহত হন। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিকশাচালক বাচ্চু মিয়া (৩০) মারা যান। সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে।

লাকসাম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আলী হোসেন দুয়ারী দাবি করেছেন, জামায়াত-শিবিরের গুলিতে ওই রিকশাচালক নিহত হয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের পৌর এলাকার জগাইমোড়ে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা পিকেটিংয়ের চেষ্টা চালান। সেখান থেকে পুলিশ জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নূর কায়েমকে আটক করে। এ ঘটনার জের ধরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে একজন পথচারীসহ ১০ জন আহত হন।

সাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে পথচারী সাকমান হোসেনের বুকে কাঁদানে গ্যাসের শেল লাগে। এরপর তিনি পাশের পুকুরে পড়ে যান। সকাল পৌনে নয়টার দিকে স্থানীয় মঈনুদ্দীন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই হাসপাতালের চিকিত্সক আবদুল আজিজ সরকার তাঁর মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত সাকমান হোসেন জেলার সদর উপজেলার মাছুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। লোকমানের গায়ে শেলের আঘাত লাগতে পারে। আমরা তো দেখিনি।’ তবে কাঁদানে গ্যাসের শেলে নয়, পানিতে পড়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

বগুড়া

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিকেলের দিকে বগুড়া শাজাহানপুর থানার লিচুতলায় এলাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা পিকেটিংয়ের চেষ্টা চালান। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে  বিএনপি কর্মী সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুঁড়ে মারে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় একজন নিহত হন। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সহকারী পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে পুলিশও পাল্টা রাবার বুলেট ছুড়ে। এরপর ঘটনাস্থলকে থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সাতক্ষীরা ও সিরাজগঞ্জ, বগুড়া প্রতিনিধি এবং লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি)